দুর্যোগ ১২ নভেম্বর, ২০১৯ ০৪:৪৯

যে কারনে লক্ষ্মীপুরের ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ১২ নভেম্বর

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

দুর্বল হয়েছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। তবে ক্ষতির রেশ কেটে উঠতে লাগবে অনেক সময়। এরইমধ্যে ইতিহাস মনে করে দিয়েছে ১২ নভেম্বরের কথা। ১৯৭০ সালের এই দিনটিতে লক্ষ্মীপুরসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। এতে ৫ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় মেঘনা ও ভুলুয়া নদীর উপকূলীয় চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। স্রোতে ভেসে যায় নারী শিশু ও বৃদ্ধসহ অসংখ্য মানুষ। এতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

স্বজন হারাদের তথ্যমতে, ৭০ সালে উপকূলীয় চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত রেডিও ছিল না। তবে ঘটনার দিন রেডিওতে উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু কেউ তা জানতে পারেনি। যে কয়েকজনের কাছে রেডিও ছিল তারা শুনতে পেরেও বিশ্বাস করেনি। আবার ওইদিন সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছিল। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় হালকা বাতাস। গভীর রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছিল তখনই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার। ঝড় আর পাহাড়সম স্রোতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূল।

জানা গেছে, দেশের ইতিহাসে ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস সবচেয়ে বড় প্রলয়ংকরী ঘটনা। ওইদিন লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনা উপকূলীয় চরআবদুল্লাহ, কমলনগরের ভুলুয়া নদী উপকূলীয় চরকাদিরাসহ নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় এটি হানা দেয়। দিনের আলোয় যতদূর চোখ যায় শুধু মরদেহ দেখা যায়। মরদেহের গন্ধে মানুষ কাছে যেতে পারেনি। ৫-১০ ফুটের জলোচ্ছ্বাসের কারণে মাটি দেওয়া যায়নি মৃত মানুষগুলোকে।

 এদিকে, ১২ নভেম্বর এলেই নির্দিষ্ট কিছু সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করে। মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানি ও নিহতদের স্মরণে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভার আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এত বড় একটি ঘটনা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্মরণ করা হয় না। যে কারণে এই দিনটিকে উপকূল দিবস করার দাবি উঠেছে।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকাল থেকে বিভিন্ন সময় লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ, কমলনগর প্রেসক্লাব, রায়পুর ও রামগতিতে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উপকূল দিবস বাস্তবায়নের দাবিতে র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় ‘কোস্টাল জার্নালিজম নেটওয়ার্ক’ এবং ‘চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ’ ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবসের দাবি তুলে ধরে।