সোশ্যাল মিডিয়া ২৭ জুলাই, ২০১৯ ১০:২১

‘আমার যখন মৃত্যু আসবে’

‘আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সব কিছুই মরণশীল। কোনো জীবের পক্ষে মৃত্যুকে এড়ানো সম্ভব নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অনুসারীদের মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করা এবং মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন।’ (আল কোরআন)

‘এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, লোকদের মধ্যে অধিক বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও সতর্ক ব্যক্তি কে? উত্তরে নবীজী বললেন, লোকদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করে এবং তার জন্য যে সবচেয়ে বেশি প্রস্তুতি গ্রহণ করে, সেই হচ্ছে প্রকৃত বুদ্ধিমান ও হুশিয়ার লোক। তারাই দুনিয়ার সম্মান ও পরকালের মর্যাদা উভয়ই লাভ করতে পারে।’ (আল হাদিস)

রহমত, মাগফিরাতের দিন শেষে শুরু হয়েছে নাজাতের দশক। পবিত্র মাহে রমজানের এই দশকের মর্যাদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। তাই এই দশকে ইবাদত-বন্দেগী করার পাশাপাশি আমাদের বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করা উচিৎ। মানুষের মৃত্যু-পরবর্তী জীবন হলো অনন্ত।

দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের ভিত্তিতে পরকালের জীবনে কে জান্নাতে থাকবে, আর কে জাহান্নামে থাকবে, তা নির্ধারিত হবে। কিয়ামতের কঠিন দিনে প্রতিটি মানুষকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। তাই এই জবাবদিহিতার প্রস্তুতি স্বরূপ মৃত্যুকে সবসময় স্মরণে রেখে নেক আমলে ও আল্লাহ হুকুম-আহকাম পালনে মনযোগী হতে হবে।

‘আমার যখন মৃত্যু আসবে’ এই শিরোনামে মসনবি শরীফে মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমীর জগদ্বিখ্যাত একটি কবিতা আছে। কাব্য সাহিত্য ও সুফি ধারার সাহিত্য জগতে মাওলানা রুমীর এই কবিতাটি এক অমর এবং অনন্য নক্ষত্র হয়ে আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।

‘আমার যখন মৃত্যু আসবে’ এই কবিতাটির কাব্যিক অনুবাদ নিচে উল্লেখ করা হলো-

‘আমার কফিন যখন নিয়ে যাবে

তুমি তখন এটা ভেবো না— আমি এ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছি!

চোখ থেকে অশ্রু ফেলো না

মুষড়ে যেও না গভীর অবসাদে কিংবা দুঃখে

আমি পড়ে যাচ্ছি না কোন অন্তর্হীন গভীর ভয়ংকর কুয়ায়!

 

দেখবে যখন আমার মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছে

তুমি কেঁদো না- আমি কোথাও যাচ্ছি না

আমি কেবল পৌঁছে যাচ্ছি অনন্ত প্রেমে।

 

মানুষ যখন আমাকে কবরে শোয়াবে

বিদায় বলো না আমাকে! কবর কেবল একটা পর্দা মাত্র

এটা পেরোলেই স্বর্গ।

 

তুমি কেবল দেখেছো আমাকে কবরে নামতে

এখন দেখো আমি জেগে উঠছি!

কিভাবে এটার শেষ হয় সেখানে

যখন সূর্য অস্তাচলে যায় কিংবা চাঁদ ডুবে?

এটা মনে হবে এখানেই শেষ

অথচ এটা অনেকটা সূর্য উঠার মত, এটা বরং সুপ্রভাত

যখনই কবর ঢেকে দেয়া হবে

ঠিক তখনই তোমার আত্মা আবার মুক্ত হবে।

তুমি কি কখনো দেখছো—

একটা বীজ মাটিতে রোপন করা হয়েছে

কিন্তু নতুনভাবে জন্মায়নি?

তাহলে তুমি কেন সন্দেহ করো!

মানুষ নামের একটা বীজ জাগবে না?

তুমি কি কখনো দেখেছো?

একটা বালতি কুয়ায় নামানো হয়েছে

অথচ এটা খালি ফিরে এসেছে?

তাহলে তুমি কেন আহাজারি করো!

একটা আত্মার জন্য

যখন এটা কুয়া থেকে উঠে আসে ইউনুসের মত!

তুমি শেষবার নৈঃশব্দে ডুববে

তোমার শব্দ ও আত্মা পৌঁছে যাবে এমন এক পৃথিবীতে

যেখানে কোন স্থান নেই, সময় বলে কিছু নেই!’

 

নোট: মহাকবি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি ১২০৭ সালে আফগানিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ছিলেন ১৩ শতকের একজন ফার্সি সুন্নি মুসলিম কবি। তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি এবং ‘বেস্ট সেলিং পয়েট’ বলা হয়। মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির অনন্য সাহিত্যকর্ম ‘মসনবি’ কাব্যে কল্পনা, বাস্তবতা, প্রেম, আধ্যাত্মিকতা, শিক্ষা, রহস্য, রূপকতা ও উপদেশসহ নানা ধরনের আয়োজন প্রায় ৮০০ বছর পরও তার কবিতাকে অত্যুজ্জ্বল করে রেখেছে বিশ্বসাহিত্যে।