ডেস্ক রিপোর্ট।।
দিনাজপুরের বিরামপুর, হাকিমপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলায় দিন দিন মাদকাসক্ত সন্তানদের অত্যাচারে অতিষ্ট অভিভাবকদের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করছেন। অনেকেই মান সম্মানের কথা ভেবে নিরবে সন্তানের অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করছেন।
চার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানা সূত্র মতে, বিরামপুর, হাকিমপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাটে প্রতি সপ্তাহে গড়ে দুজন থেকে তিনজন অভিভাবক তাদের মাদকাসক্ত সন্তানের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে আইনের আওতায় নেযার আবেদন করেন।
দিনাজপুরের মাদক নিরাময় কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুরে মোট চারটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে প্রতি মাসে গড়ে ৮০ থেকে ১০০ জন মাদকাসক্ত ভর্তি হয়। যাদের বেশির ভাগের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
গত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে মাদকাসক্তের মাত্রা ২০ খেকে ৩০ ভাগ বেড়েছে। বিরামপুর ও হাকিমপুর সীমান্ত এলাকা হওয়ায় মাদকদ্রব্যও সহজলভ্য।
বিরামপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাদকের মামলা বেশি হয়েছে। এছাড়া চার থানায় মাদকের মামলায় দেখা গেছে, বিরামপুরে ৩৬৫ জন, হাকিমপুর ৫০৫ জন, নবাবগঞ্জ ২৫০ জন ও ঘোড়াঘাটে ১৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটকের একটি বড় অংশই তরুণ।
বিরামপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে মাদক একটি ভয়ানক ব্যাধি। মাদকাসক্তদের এই পথ থেকে ফেরাতে প্রতিটি পরিবারকে সচেতন হতে হবে। ছেলে কাদের সঙ্গে মিশছে, সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে কত সময় থাকছে তা পরিবারের খেয়াল রাখতে হবে।
বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ সিনিয়ার সার্কেল এএসপি মিথুন সরকার বলেন, সন্তানদের মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম দুটি বড় কারণ পারিবারিক বন্ধন আলগা হয়ে যাওয়া এবং অভিভাবকদের বড় অংশ প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞতা। পারিবারিক বন্ধন আলগা হয়ে যাওয়ার কারণে বাবা মা ছাড়া পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সন্তানদের শাসন করতে পারছেন না। দিন দিন এমন এক সমাজ ব্যবস্থা চালু হয়েছে, যেখানে অপরাধীদের বিষয়ে কেউ আর অভিযোগও দিতে চাচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, অভিভাবকদের প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞতার সুযোগে সন্তানেরা প্রযুক্তির অপব্যবহারে আসক্ত হচ্ছে। এর একটি পর্যায়ে সন্তানেরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুর রহমান বলেন, তিনি গত দুই বছর থেকে বিরামপুরে কর্মরত। তিনি যোগদানের পর থেকেই গড়ে প্রতি সপ্তাহে দুজন অভিভাবক তাদের মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আসেন। সেই সঙ্গে মাদকাসক্ত সন্তানকে আটক করে কারাগারে পাঠানোর জোর অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, বাবা-মা কতটা নির্যাতিত হলে তাদের সন্তানকে জেলে পাঠানোর অনুরোধ করেন তা অনুমেয়। তখন পুলিশের সহায়তায় সত্যতা নিশ্চিত করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়।