জাতীয় ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৩:৩৭

মসজিদ কেন্দ্রীক প্রভাব বিস্তার ও সংঘাত, নীতিমালার কথা ভাবছে সরকার

তানজিলুর রহমান:

 ঘটনা-১

২০২২ সালের এপ্রিলে রাজশাহীর চারঘাটে মসজিদ কমিটির বর্তমান সাবেক সভাপতির বিরোধের জেরে সংঘর্ঘে ১৫ জন আহত এবং একজন নিহত হন। এক পক্ষ মসজিদে নামাজ আদায় না করে এলাকার একটি আম বাগানে অস্থায়ী ভিত্তিতে মসজিদ নির্মাণ করে নামাজ আদায় শুরু করেন। এপ্রিল ইফতারির খাবার নিয়ে দুপক্ষে সংঘর্ষ বাধলে ঘটনা ঘটে।

ঘটনা-২

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নের আলমদারপাড়া গ্রামে ১৯৯৬ সালে বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এলাকার কিছু লোকজন এই মসজিদের ২০ গজের ব্যবধানে আরেকটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিলে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ২০২১ সালের জুলাই মাসে মসজিদ নির্মাণ নিয়ে সংঘর্ষ হয়।

ঘটনা-৩

নওগাঁর বদলগাছি উপজেলায় ২০২২ সালের ১৯ আগস্ট মসজিদের অজুখানা নির্মাণের স্থান নিয়ে দুই পক্ষের মারামারি হয়। সেদিন জুমার নামাজের পর ওই সংঘর্ষে আকবর আলী নামের একজন বৃদ্ধ মারা যান। মিঠাপুর ইউনিয়নের মিঠাপুর পুকুরপাড় গ্রামে ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনা-৪

২০২১ সালের ২২ এপ্রিলে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মসজিদ নির্মাণ নিয়ে সংঘর্ষে আহত হন আট জন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে পৃথক সময়ে ঘটা এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মসজিদ যে শুধু ধর্ম চর্চার প্রাণকেন্দ্র এমনটাই নয়। জামাতের সহিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও কোরআন শিক্ষা, ধর্ম চর্চা, ধর্ম প্রচারে ভূমিকা রাখে মসজিদ। এমনকি স্থানীয় সামাজিক নানা উদ্যোগেও মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জুমআর খুতবায় সমাজের নানা সংকট-অসঙ্গতি নিয়ে সমাধানের পথনির্দেশনাও দেয়া হয়। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ইবাদতের জন্য যে মসজিদে যান মুসলমানরা, সেই মসজিদকে কেন্দ্র করেই সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে হচ্ছে বিরোধ। কখনো এই মসজিদ হয়ে উঠে স্থানীয় ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল। এই বিরোধ ও ক্ষমতার রেশারেশি কখনও কখনও গড়ায় প্রাণহানি পর্যন্ত। কখনও মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে, কখনও মসজিদ কমিটি কিংবা মসজিদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। রক্তারক্তি বা প্রাণহানিও ঘটছে।

এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় উদ্ভূত বিরোধ-সংঘাত রোধে মসজিদ নিবন্ধনসহ নীতিমালা করার কথা ভাবছে সরকার।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এখন চলছে মসজিদ নিয়ে প্রতিযোগিতা। কোন মসজিদে এসি আছে, কোন এলাকায় কত বড় মসজিদ, কোন মসজিদ কত বড় মাহফিল করে জনসমাগম করতে পারে। স্থানীয় ক্ষমতার রক্ষাকবচ হিসেবে নিজের আধিপত্য জাহির করতে অনেকেই এলাকায় মসজিদ থাকলেও নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করেন। কেউ কেউ মসজিদ কমিটির নেতৃত্বে আসতে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন।

মসজিদ নিয়ে সংর্ঘষের ঘটনা দুঃখজনক জানিয়ে জাতীয় ইমাম সমাজের এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট বেলায়েত হোসাইন আল-ফিরোজী বলেন, এগুলো প্রতিরোধে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

অনেকটাই বাস্তবিকতার ভঙ্গিতে ক্ষেদ প্রকাশ করে  ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, দেখা যায় একই বাড়িতে পাঁচ ভাই। তিন ভাই একদিকে, দুই ভাই আরেক দিকে। আল্লাহ তাদের সামর্থ দিয়েছে, আগের যে মসজিদ আছে তার ২০০ গজের মধ্যে আরেকটি মসজিদ করে ফেলেছে। এমন চিত্র বাংলাদেশে রয়ে গিয়েছে। আবার বংশভিত্তিক (চৌধুরী, খান, শেখ) মসজিদের প্রবণতা আছে। প্রতিনিয়ত এভাবে মসজিদ হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। এগুলোকে একটা নিয়ম-শৃঙ্খলায় আনার জন্য চিন্তা-ভাবনা আমাদের আছে। এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনাও করেছি। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে সময়ের প্রয়োজন।

সরকারি উদ্যোগে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ হয়ে গেলে তাদের ওপর বিরাট দায়িত্ব অর্পন করা হবে। কোথায় মসজিদ আছে, কারা পরিচালনা করছে এগুলো রেজিস্ট্রেশন করা হবে। এরপর কোথায় মসজিদ করা যাবে, এক মসজিদ থেকে আরেক মসজিদ কত দূরত্বে থাকবে, কারা পরিচালনা করবেন এসব বিষয়গুলোকে নিয়মনীতির আওতায় আনা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ডাটা বেজের কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।

 

 

 

আমাদের কাগজ/টিআর