খেলাধুলা ১৯ নভেম্বর, ২০২৫ ০৮:২৪

ভারতকে হারিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে খুশি করেছি: হামজা

বিশেষ সংবাদদাতা    
ভারতকে হারানোর পর কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন হামজা চৌধুরীকে নিয়ে। শেখ মোরসালিনের গোলে বাংলাদেশ ২২ বছর পর ভারতকে হারালেও দর্শকদের চোখে ‘ম্যাচসেরা’ ছিলেন হামজা চৌধুরী। ১২ মিনিটে করা গোলটি যে বাকি সময় বাংলাদেশ ধরে রেখেছিল তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ইংলিশ লিগে খেলা এই ফুটবলারের। কখনো রক্ষণে, কখনো মধ্যমাঠে এবং কখনো আক্রমণভাগে খেলে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ আরেকবার দিয়েছেন হামজা। ম্যাচের পর তার জন্যই যে ছিল সবার অপেক্ষা।

এমন একটি জয়ের পর সবার প্রতিক্রিয়াই থাকে উচ্ছ্বসিত। সংবাদ সম্মেলনে তাই বিশাল হাসিমুখ নিয়ে বসেন হামজা এবং প্রথমে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এরপর একের পর এক প্রশ্ন তাকে। বাংলাদেশের জার্সিতে সপ্তম ম্যাচে জয় পাওয়া হামজা বললেন, ‘ভারতকে হারিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে খুশি করতে পেরেছি। পৃথিবীর আর কোথাও এটা হয়তো সম্ভব নয়। তাই এটি অবশ্যই আমার ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্যের মধ্যে থাকবে।’

‘হ্যাঁ। মানুষ খুশি। একটা লম্বা সময় পর। তাও দুই যুগের কাছাকাছি। ২০০৩ সালের পর ভারতের বিপক্ষে জয় এলো ২০২৫ সালে। এশিয়ান কাপ বাছাই থেকে বিদায় নেওয়ার কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে ভারতকে হারানোর পর। আগের ম্যাচগুলোর মতো শেষ মুহূর্তে আমরা আর ম্যাচ হারাইনি বা পয়েন্ট হাতছাড়া করিনি। কারণ, আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যে সবাই মিলে পরিস্থিতি সামলাতে পারবো। খেলোয়াড়দের জন্য, স্টাফদের জন্য আমি ভীষণ খুশি। এত পরিশ্রমের পর দলটির এমন বড় কিছু পাওয়ারই কথা ছিল,’ যোগ করেন তিনি।

আপনি কেমন অনুভব করছেন- এই প্রশ্নের জবাবে হামজা বাংলাতেই বললেন, ‘খুব ভালো লাগছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা জিতেছি। আমি তো আসলে ক্যাম্পে একেবারে শেষে যোগ দিয়েছি। কোচ, কোচিং স্টাফ আর খেলোয়াড়রা প্রায় ২৩ দিন ধরে এখানে আছেন, ৫০০ ঘণ্টারও বেশি। কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন সবাই। আলহামদুলিল্লাহ, আজ তার ফল মিলেছে।’

ভারত ম্যাচের অনুশীলনে বিলম্বে যোগ দিয়েছিলেন হামজা। ম্যাচের পর সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আর শামিত একটু দেরিতে যোগ দিয়েছি। এসে শুধু কিছুটা মানসিকতা যোগ করার চেষ্টা করেছি। আজ আমরা সেই মানসিকতাই দেখিয়েছি মাঠে। শেষ চার ম্যাচে আমরা দারুণ খেলেছি, ট্যাকটিক্যালি খুব ভালো ছিলাম। তবে শেষ দিকে হোঁচট খাচ্ছিলাম। আজ উল্টোটা হয়েছে। হয়তো বল পায়ে ততটা ভালো ছিলাম না, কিন্তু দেখিয়েছি আমরা কতটা স্থিতিশীল হতে পারি। এবার সময় এসেছে দুই দিক একত্র করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার, ইনশাআল্লাহ।’

দারুণ এ জয়ের পরও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের কোনো লাভ হয়নি। কারণ, আগেই বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল। তাই তাতে কোনো খারাপ লাগছে কি না, জানতে চাইলে হামজা বলেন, ‘আমরা জিতেছি ভালো লাগছে।’

মার্চে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচ বাংলাদেশের। হামজা বলেন, ‘এই ম্যাচটি এক ধরনের ফাইনাল ছিল। ২২ বছর মানুষ অপেক্ষা করেছে বড় ম্যাচ জেতার জন্য। আজ সেটাই হয়েছে। আমরা সবাই জানতাম, পারফরম্যান্স তো হচ্ছেই, দরকার ফল। আজ হয়তো পারফরম্যান্সটা পুরোদমে হয়নি, কিন্তু ফল এসেছে। এখন মার্চে আবার নতুন করে তৈরি হবো এবং দুটিকে একসঙ্গে মিলিয়ে আরও শক্ত দল হয়ে ফিরব, ইনশাআল্লাহ।’

শিলংয়ে অভিষেক। এরপর ঢাকা, হংকং। শেষ পর্যন্ত জিতলেন। এতে কি স্বপ্ন পূরণ হলো? হ্যামজা বলেন, ‘অবশ্যই, স্বপ্ন পূরণ। আপনার একাধিক স্বপ্ন থাকতে পারে। এটি তার একটি। ইনশাআল্লাহ, খুব তাড়াতাড়ি আমরা বড় কোনো টুর্নামেন্টেও কোয়ালিফাই করবো। আমরা এখন প্রমাণ করেছি আমরা সক্ষম। শুধু সময় আর ধৈর্য দরকার। আমাদের দলে বহু কম অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। পূর্ণ স্টেডিয়ামে খেলা বিশাল চাপ। জায়ান, মিঠু- সবাই চাপ সামলে দারুণ খেলেছে। মিঠুর তো শেষদিকে কয়েকটি বড় বল ধরাতেই ম্যাচ ধরে রাখা গেছে।’