রাজনীতি ১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ০৮:৫৮

গঙ্গা থেকে সব ন্যায্য হিস্যা পাওয়া আমাদের অধিকার : মির্জা ফখরুল

জেলা প্রতিনিধি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলকে বাঁচাতে এই আন্দোলন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা যদি মরে যায় তাহলে আমরাও মরে যাব। ভারত ব্রিটিশ আমল থেকেই পদ্মা নদীতে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পাকিস্তান আমলে তারা এই ফারাক্কা বাঁধ চুপিচুপি নির্মাণ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম ফারাক্কা বাঁধ চালুর অনুমতি দেয় শেখ মুজিবুর রহমান। 

শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে ‘বাঁচাও পদ্মা, বাঁচাও দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগানে বিশাল গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী বছর ২০২৬ সালে ভারতের সাথে চুক্তি শেষ হবে। আমরা জানি না ভারত এখন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তাই আমাদের দায়িত্ব হলো সারা বিশ্বে আমাদের বার্তা পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের মানুষ, গঙ্গা থেকে সব ন্যায্য হিস্যা পাওয়া আমাদের অধিকার। এটা কোনো দয়া নয়।

তিনি আরও বলেন, ভারত গঙ্গা নদীতে বাঁধ দিয়ে আমাদের পানি বন্ধ করে দিয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে গঙ্গা ব্যারাজ তৈরি করে সেখানে বাঁধ দিয়ে পানিকে আটকে রেখে শুষ্ক মৌসুমে সেই পানিকে আমাদের নদীগুলোতে ছেড়ে দিতে পারি। আর বন্যার সময় সেই পানিকে আমরা আটকে রাখতে পারি। এই প্রকল্প যদি আমরা করতে পারি তাহলে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের রুক্ষতা অনেকটাই কমে যাবে। আজকে হারুন সাহেব (সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ) এই আন্দোলন শুরু করলেন, এই আন্দোলন চলবে যতক্ষণ না আমরা পদ্মার ন্যায্য হিস্যা পাব।

পিআর নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে একটি দল সংকটকে আরও সংকটে নিয়ে যাচ্ছে। গত ১৭ অক্টোবর সংস্কারের সনদ সই করেছি এবং অনেকগুলো বিষয়ে একেমত হয়ে গেলাম। এখন হঠাৎ করেই সেই দলটি বলতে শুরু করেছে না আমাদের পিআর দরকার। নেতাকর্মীদের তিনি প্রশ্ন করেন- আপনারা পিআর বোঝেন? আমিও বুঝি না। প্রপোশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর)। এর বাংলা হলো আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, এটা বুঝা আরও কঠিন। যে জিনিসটা বাংলাদেশের মানুষ বোঝে না ওই জিনিসটা ঘাড়ের মধ্যে চাপিয়ে দিচ্ছেন কার ইঙ্গিতে?

জামায়াতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই দেশের মানুষ ধর্মপ্রিয়। ধর্মকে ভালোবাসে। আল্লাহর নবীকে ভালোবাসে, বিশ্বাস করে। কিন্তু ধর্মান্ধ নয়, সাম্প্রদায়িক নয়। গত নির্বাচনের হিসাব করে দেখেন। কত পার্সেন্ট ভোট পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। পাঁচ-ছয় পার্সেন্ট। রাতারাতি লাফ দিয়ে ৫১ পার্সেন্ট হয়ে যাবেন- এটা মনে কইরেন না। বাংলাদেশের মানুষ সহজে আপনাদের ভোট দেবে না। কারণ আপনাদেরকে তারা বিশ্বাস করে না। পাকিস্তান আন্দোলন করেছিলেন মুসলমানরা। পাকিস্তান আন্দোলন ছিল মুসলমান ভাইদের স্বার্থ রক্ষার জন্য, অধিকাংশ মানুষ মুসলিম। আপনাদের নেতা মওদুদী এটার বিরোধিতা করেছিল। ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ করলাম, আপনারা শুধু এটার বিরোধিতাই করেন নাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে গণহত্যা করেছেন। এ কথা বলতে আমার কোনো দ্বিধা হয় না। কারণ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি এই দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। আজকে উল্টা-পাল্টা, আবোল-তাবোল, সোশ্যাল মিডিয়াতে কথা বলে আমাদের মাথা নামাতে পারবেন না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে, এই নির্বাচন হতে হবে। এই নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এই নির্বাচন দিতে যত দেরি হচ্ছে বাংলাদেশ তত দুর্বল হচ্ছে। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো সরকার সফলতার সঙ্গে দেশ চালাতে পারে না। 

জামায়াতের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলছি- আপনারা ভালো হয়ে যান। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতিতো অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। কেন মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন। আপনাদের যত বিলবোর্ড দেখলাম, অন্য কোনো দলের তো এতো দেখলাম না।  যতো পোস্টার দেখলাম,  অন্য কোনো দলের এতো দেখলাম না। তাহলে কেন মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন। আপনারাতো নির্বাচন করবেন। নির্বাচন না করলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না। নির্বাচন করলে আপনারা পরাজিত হবেন, তাই নির্বাচন পেছাতে চান।

গণসমাবেশে  বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ, আরেক উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান মিঞা, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আমিনুল ইসলামসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।