রাজনীতি ৩ জুলাই, ২০২৫ ০৯:৪৫

শাপলা পেতে ‘মরিয়া’ নাগরিক ঐক্য, এনসিপিও আশাবাদী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক    
‘নতুন বাংলাদেশে’ আগের মতো সরকারি দল বলে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবে এমন বিষয় এখন নেই উল্লেখ করে প্রতীক বরাদ্দে যেন বঞ্চনা না হয় তা তুলে ধরেছে নাগরিক ঐক্যের একটি প্রতিনিধিদল। দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলাকে নাগরিক ঐক্যের জন্য সংরক্ষণের দাবি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছে তারা।

অন্যদিকে দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা বরাদ্দ পাবে বলে আশাবাদী জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

নতুন প্রতীক তালিকাভুক্ত হলে আগে আবেদন করায় শাপলা প্রতীক অবশ্যই নাগরিক ঐক্য পাবে বলে দাবি করেছে দলটি। তবে নতুন দল হিসেবে এনসিপি নিবন্ধন আবেদনের সময় প্রতীকটি চাওয়ায় উদ্বেগও জানিয়েছে নাগরিক ঐক্য।

বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

পরে দলটির এ নেতা বলেন, আমাদের একটা কনসার্নের জায়গা ছিল, প্রতীক পরিবর্তনের জন্য আমাদের আবেদন ছিল সেটা নিয়ে কথা বলতে এসেছি। ১৭ জুন আমাদের নাগরিক ঐক্যের প্রতীক কেটলি পরিবর্তন করে পছন্দের ক্রমানুসারে শাপলা ও দোয়েল দিয়েছিলাম।

এখনো নতুন দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত হয়নি। সেই নতুন প্রতীক বিধিমালায় যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিক ঐক্যের দাবি পর্যালোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার।

তিনি বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত কে নিবন্ধন পাবে, কে নিবন্ধন পাবে না সেটা নির্ধারিত হয়নি। যদি নতুন প্রতীক শাপলা গেজেটভুক্ত হয়, সেখানে আমরা যেহেতু আগে আবেদন করেছি, আমাদের সেক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়া হবে। আমরা অবশ্যই বঞ্চিত হবো না, সেটা আমরা যেমন প্রত্যাশা করি, তেমনি কমিশনও নিশ্চিত করেছে।

সিইসির সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের প্রতিনিধিদলের বৈঠকের সময় নির্বাচন কমিশন সচিবও উপস্থিত ছিলেন।

নাগরিক ঐক্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন নারী ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ফেরদৌসী আক্তার ও দপ্তর সম্পাদক মহিদুজ্জামান মহিদ।

শাপলা পেতে ‘মরিয়া’ নাগরিক ঐক্য, এনসিপিও আশাবাদীসিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের পর কথা বলছেন নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার

২০১৮, ২০২৪ সালের ভোটের আগে নাগরিক ঐক্য নিবন্ধন আবেদন করেছিল। তখন নিবন্ধন না পাওয়ায় পছন্দের প্রতীকও পায়নি। বরং ওই সময় অন্যদলগুলো নিবন্ধন পেয়ে তাদের পছন্দের প্রতীক পেয়ে যায়। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেপ্টেম্বরে নিবন্ধন পায় নাগরিক ঐক্য।

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ারের বলেন, আমরা যখন নিবন্ধন পাই, তখন আর আমরা পছন্দ অনুযায়ী প্রতীক পাইনি। এ বিবেচনায় আমরা গত ১৭ জুন প্রতীক পরিবর্তনের জন্য আবেদন করি এবং পছন্দের ক্রম শাপলা ও দোয়েল চাই।

এখন নতুন করে ১৪৪টি দলের ১৪৭টি আবেদন এসেছে। এর মধ্যে নিবন্ধন আবেদনের শেষদিন ২২ জুন একটি দল জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) দলীয় প্রতীক শাপলা চেয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের কনসার্নের জায়গা হচ্ছে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনভাবে তথ্য দেখেছি কমিশন তাদের শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছে। কনসার্নটা আমরা সিইসিকে জানাতে এসেছি। নিবন্ধনের কাজ শেষ না করে এ ধরনের বিষয় আসাটা যৌক্তিক নয়।

তিনি বলেন, নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটা জটিল ও নিবন্ধনশর্ত পূরণ যাচাইয়ের আগে বিধিমালায় সব মিলিয়ে শতাধিক প্রতীক যুক্ত হচ্ছে। কমিশন জানিয়েছে, বিদ্যমান ৬৯ থেকে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।

নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, সিইসি ও সচিবকে আমরা জানিয়েছি, নতুন প্রতীক শাপলা গেজেটভুক্ত হয় কিংবা দোয়েল যুক্ত হয়; সেক্ষেত্রে ১৭ জুন যেহেতু আমরা আবেদন করেছি এবং পরে একই মার্কা নিয়ে আরেকটা আবেদন হলেও শাপলা নাগরিক ঐক্যেরই প্রাপ্য। সেটার যেন ব্যত্যয় না ঘটে।


‘নতুন বাংলাদেশে’ আওয়ামী লীগ আমলের মতো সরকারি দল বলে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবেন এমন বিষয় এখন নেই বলে সিইসির কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এই নেতা বলেন, কমিশন বিষয়টি বিবেচনা করবে। আমাদের আগে নিবন্ধিত দল হিসেবে প্রতীকটি বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করি। প্রতীক তালিকা থেকে প্রাপ্তি সাপেক্ষে অন্য দল যেটা পাবে তাদের সেটা বরাদ্দ দিতে হবে।

কমিশন কী বলেছে জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, অবশ্যই, আপনারা আগে আবেদন করেছেন। এখন পর্যন্ত যারা আবেদন করেছে, আমরা চাই দল নিবন্ধন পাক। যে দলের বিষয়ে আলোচনা চলছে, সামনে দিনে তারা রাজনীতিতে, নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নিবন্ধন পাক সেটা আমরা চাই। নিবন্ধন হয়ে গেছে এমন নয়, রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল করার পরেই সেটা হবে।

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে ভোটের প্রস্তুতির বিষয়েও আলোচনা করার কথা জানান নাগরিক ঐক্যের এ প্রতিনিধি।

সাকিব আনোয়ার আরও বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছি। প্রতীক পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানিয়েছি আমরা। কমিশন ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এটাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আমরা প্রত্যাশা করি, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা যেভাবে বলেছেন সেভাবে আমরাও চাই।