স্বাস্থ্য সেবা ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ১০:৪৯

আজ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস

ছবি:ইন্টারনেট

ছবি:ইন্টারনেট

নিজস্ব প্রতিবেদক: বয়স বাড়লে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। দেশে তৃতীয় মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্ট্রোককে দায়ী করা হয়। কিন্তু ৪০ বছরের নিচে বয়সী তরুণ এবং শিশুরা স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। এই বয়সী রোগীদের আক্রান্ত হওয়ার হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। স্ট্রোকের চিকিৎসা ঢাকার বাইরে অপ্রতুল। ‘সময় মূল্যবান’এ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ (২৯ অক্টোবর) বিশ্বজুরে পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস।

দিবস উপলক্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। 

ঢাকার বাইরে স্ট্রোকের চিকিৎসা অপ্রতুল। স্ট্রোক হলে ব্রেনে প্রতি মিনিটে ২০ লাখ নিউরন ধ্বংস হয়। তাই প্রথম উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরের চার ঘণ্টা গোল্ডেন আওয়ার। এ সময় রোগীকে হাসপাতালে আনলে ওষুধের মাধ্যমে কিংবা অপারেশন করে বা ওষুধের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করতে পারেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দেরি হলে পঙ্গুত্ব ও জীবনহানির ঝুঁকি বেড়ে যায়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের ইন্টারভেনশন নিউরোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. হুমায়ুন কবির হিমু বলেন, স্ট্রোকের রোগীকে দ্রুত নিয়ে আসতে এর লক্ষণগুলো জানা জরুরি।

 মুখ এক পাশে বেঁকে যাওয়া, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, ঠিক মতো সাড়া না দেওয়া, একটা জিনিস দুটা দেখতে পাওয়া, অনেক সময় দেখতে পান না রোগী। এ ছাড়া শরীরে ভারসাম্য না পেলে বুঝতে হবে ওই ব্যক্তি স্ট্রোক করেছে। স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে আনলে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করা যায়। কিন্তু দেরি হলে জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের স্ট্রোক সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর ডা. এস এম সাদলী বলেন, স্ট্রোক আক্রান্ত হওয়া রোগীদের ১৫-২০ ভাগের বয়স ১৮-৫০ বছরের মধ্যে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টরেল, ধূমপান ও স্থূলতা এই পাঁচটি বিষয় স্ট্রোকের রিস্ক ফ্যাক্টর। ইয়াবা, কোকেন, অ্যালকোহলে আসক্ত ব্যক্তিরা স্ট্রোকের শিকার হয়। এ ছাড়া হৃদরোগ, বাতজ্বর স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। চর্বি জাতীয় খাবার কমিয়ে শাক-সবজি ফলমূল খেতে হবে, নিয়মিত ৪০ মিনিট হাঁটতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, ‘উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছেন। অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনের কারণে প্রতি ১০০ জনে ৩৬ জন স্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া রোগটিতে আক্রান্ত ১৯ শতাংশের দেহে অতিরিক্ত মেদ, ১৭ শতাংশ মানসিক চাপে ভোগেন। এ ছাড়া ২৩ শতাংশ জাঙ্ক ফুডে আসক্ত।’

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এত দিন সবার ধারণা ছিল স্ট্রোক শুধু বয়স্ক ব্যক্তিদের হয়। তবে সেই ধারণা এখন পরিবর্তন হয়েছে। তরুণদের স্ট্রোকের সংখ্যা বেড়েছে। ৪০ বছরের নিচে স্ট্রোক রোগী শতকরা ১০ ভাগ। একই সঙ্গে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও বেড়েছে। ৪০ বছরের নিচে। স্ট্রোক দুই ধরনের হয় রক্তজমাট বেঁধে ও রক্তনালি ফেটে গিয়ে।’ 

দেশে অসংক্রামক রোগের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৪০ বছরে রোগটির তীব্রতা বেড়েছে শতভাগ। বর্তমানে প্রতি চারজনে একজন স্ট্রোকের ঝুঁঁকিতে রয়েছেন। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে স্ট্রোকের মাত্রা কমেছে ৪২ শতাংশ। ২০৫০ সালে বিশ্বে স্ট্রোকের মোট রোগীর ৮০ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

আমাদের কাগজ//টিএ