অপরাধ ও দুর্নীতি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০৫:৩৬

আলোচিত ক্যাসিনো এখন বিলাসবহুল লঞ্চে

ক্লাব বন্ধ। তাই বলে কি জুয়া বন্ধ? মোটেও নয়। ক্যাসিনো জগতের বড় বড় জুয়াড়িরা ঠিকই খুঁজে পেয়েছেন বিকল্প আস্তানা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ক্লাবপাড়ার জুয়া এখন জমে উঠেছে বিলাসবহুল লঞ্চে। ঢাকার সদরঘাট থেকে নিয়ম করে ছাড়ে ক্যাসিনো লঞ্চ। জুয়াড়িদের নিয়ে নৌবিহার শেষে ঘাটে ফিরে আসে গভীর রাতে। এছাড়া অনলাইনেও ঘরে বসে বিশ্বের নামিদামি ক্যাসিনোতে জুয়া খেলছেন জুয়াড়িরা। জুয়া হচ্ছে অভিজাত ফ্ল্যাটেও। রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় বড় বড় ফ্ল্যাট রীতিমতো মিনি ক্যাসিনোতে পরিণত হয়েছে।

১ বছর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাই-ভোল্টেজ অভিযানে ক্যাসিনো সম্রাটসহ প্রথম সারির কয়েকজন ধরা পড়লেও বেশ আগেই তা থিতু হয়েছে।

সূত্র বলছে, সদরঘাটের ১৫ নম্বর জেটি থেকে ক্যাসিনো লঞ্চ ছেড়ে যায় সপ্তাহে ৪ দিন। লঞ্চেই খাবার-দাবারসহ নাচ-গানের জমজমাট আয়োজনসহ জুয়াড়িদের মনোরঞ্জনের সব আয়োজনই থাকে। জুয়ার সঙ্গে বিদেশি মদ পান করেন জুয়াড়িরা। এজন্য ঘাট থেকে আগেই লঞ্চে মজুদ রাখা হয় পর্যাপ্ত মদ-বিয়ার। সারা দিন জুয়া খেলে গভীর রাতে ক্যাসিনো লঞ্চগুলো ঘাটে ফিরে আসে।

পুরান ঢাকার এক জুয়াড়ি বলেন, লঞ্চের ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করছেন জনৈক যুবলীগ নেতা খোরশেদ। তার বাড়ি পুরান ঢাকার লালবাগে। তিনি আগে মুক্তিযোদ্ধা ও আরামবাগ ক্লাবের ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জুয়াড়িদের সুবিধার জন্য জুয়া খেলার রুলেট মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বসানো হয়েছে লঞ্চে। প্রতি ট্রিপে ৫০ থেকে ৬০ জুয়াড়ি খেলায় অংশ নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে লঞ্চ ছাড়ার সময় বলা হয় সবাই পিকনিকে যাচ্ছেন।

বিভিন্ন ব্যাংকিং সংক্রান্ত ডকুমেন্ট থেকে জানা যায়, ঢাকায় অনলাইন জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন মোহাম্মদ হামিদ নামের এক ব্যক্তি। গুলশানের পিংক সিটি শপিং সেন্টার ও ধানমণ্ডির এম্পায়ার প্লাজায় মোবাইল ফোন ব্যবসার আড়ালে তিনি অনলাইন জুয়ার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তার অধীনে সাব-এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন আরও অনেকে। জুয়ার টাকা লেনদেনের অভিযোগে গোয়েন্দা সংস্থা দুটি ব্যাংক হিসাব নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। এর মধ্যে একটি হল সিটি ব্যাংকের কোনো একটি শাখায় ওপেন করা মা ইলেকট্রনিক্স ও ব্যাংক এশিয়ায় ওপেন করা সানি এন্টারপ্রাইজ নামের এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট। সূত্র বলছে, ঢাকার ক্লাবগুলোতে এক সময় অন্তত ১৫ হাজার লোক ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এদের একটি বড় অংশ এখন ফের কোনো না কোনোভাবে জুয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মুখে পালিয়ে যাওয়া নেপালিরাও এখন ফের ঢাকার জুয়া জগতে সক্রিয়।

এদের মধ্যে দীনেশ ও রাজকুমার অন্যতম। দিলকুশা ক্লাবের ক্যাসিনোতে যুক্ত এ দুই নেপালি ঢাকায় ক্যাসিনো জগতের মাফিয়া বলে এক নামে পরিচিত ছিলেন। এছাড়া কৃষ্ণা এবং বাবা নামের সহোদর নেপালি ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতেন। এখন তারা অনলাইন ক্যাসিনো চালাচ্ছেন।

সূত্র বলছে, জুয়া খেলার জন্য সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি ওয়েবসাইট চালু হয়েছে। এর মধ্যে বিডি বেটস নামের ওয়েবসাইট চালাচ্ছেন জনৈক তাহের ওরফে মোটা তাহের, দেলোয়ার ও ফারুক। এরা সবাই আগে পল্টনের জামান টাওয়ারে ক্যাসিনো বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। র‌্যাবের অভিযানের সময় কিছুদিন পালিয়ে থাকার পর এখন ফের জুয়া জগতে পা রেখেছেন তারা। বিডি বেটস ওয়েবসাইটে দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার জুয়া খেলা হচ্ছে।