ডেস্ক রিপোর্ট ।।
বরগুনার বেতাগী উপজেলার ফুলতলা নুরুনেছা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করেই মাসের পর মাস নানা অজুহাতে স্কুলে না এসেই সরকারি বেতন-ভাতা যথারীতি তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না অন্য সহকারী শিক্ষকরা।
জানা গেছে, গত ফ্রেরুয়ারি ২০১৯ মাসে ২৩ কার্যদিবসের মাত্র ৫ দিন প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান সর্বশেষ ওই স্কুলে যান। এরপর থেকে তিনি আর স্কুলে আসেননি। স্কুলে না গিয়েও তার ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সোহরাব হোসেন ও আব্দুল খালেকের মাধ্যমে শিক্ষক হাজিরা বাড়িতে নিয়ে স্বাক্ষর করছেন। একইভাবে মাসিক বেতন-ভাতাদিতে সরকারি অংশে বাড়িতে বসে স্বাক্ষর করছেন এবং যথারীতি টাকা উত্তোলন করছেন। প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমানের মাসিক বেতন ২৪ হাজার টাকা। সেই হিসেবে স্কুলে না গিয়েও গত আটমাসে সরকারি ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা উত্তোলন করছেন। অন্যদিকে এ বিদ্যালয়ে কর্মরত থেকেও ওই প্রধান শিক্ষক পার্শ্ববর্তী বাকেরগঞ্জ উপজেলার চামটা কৃষ্ণ নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একইপদে যোগদানের জন্য পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।
প্রধান শিক্ষকের এহেনো কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অভিভাবকরাও। নাম না প্রকাশের শর্তে এক অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়টি ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য এ ধরণের ফাঁকিবাজ প্রধান শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়ে পুনরায় একজন দক্ষ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া দরকার।
এ ব্যাপারে বিচিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নওয়াব হোসেন নয়ন বলেন, চাকরি বিধি অনুযায়ী একনাগাদে ১ মাস উল্লেখযোগ্য কারণ ব্যতিরেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তিনি বেতন-ভাতাপ্রাপ্য হবেন না। অথচ মাসের পর মাস কি করে অনুপস্থিত থেকে বাড়িতে বসেই বেতন ভোগ করে আসছেন ওই প্রধান শিক্ষক? এর আইনগত একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, স্কুলের পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। তাই আমার বিপক্ষে যারা আছেন তারা এটা বানিয়ে বলছেন। তাছাড়া কম্পিউটার বাড়িতে থাকার কারণে অফিসের সকল কাজ বাড়িতে বসেই করি।
প্রধান শিক্ষকের এ কাজে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে সহায়তার অভিযোগ থাকলেও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সৈয়দ গোলাম মাসুদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রধান শিক্ষককে মানবিক কারণে অনেক সুযোগ দিয়েছি। এখন আর সেই সময় নেই। দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় বিধিমোতাবেক অক্টোবর মাস থেকে তার বেতন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি সভা করে তার বিরুদ্ধে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমার নিকট লিখিতভাবে সুপারিশ করেছেন।
উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার মুহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, সর্বশেষ ৭ নভেম্বর বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়েও প্রধান শিক্ষককের হদিস মেলেনি। এর আগেও একাধিকবার তাকে না পাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে শিক্ষক হাজিরা জব্দ করে নতুন হাজিরা বহি খুলে দেওয়া হয়। এর পরেও কাউকে তোয়াক্কা না করে চলতি বছরের ফ্রেরুয়ারি থেকে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যাবধি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহীদুর রহমান বলেন, নতুন যোগদান করায় এ বিষয় অবহিত নয়। তবে বিষয়টি জানার পর খতিয়ে দেখে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাজীব আহসান বলেন, নতুন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এটি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।




















