অপরাধ ও দুর্নীতি ৪ নভেম্বর, ২০১৯ ১১:১৪

পাকশী মামলার ভয়ে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত দুর্নীতিবাজ ঠিকাদাররা

ডেস্ক রিপোর্ট ।।

বিগত ১১ বছরে রেলওয়ের বিভাগীয় সদর দফতর পাকশীতে বিভিন্ন বড় বড় কাজে দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন কয়েকজন সরকার দলীয় ঠিকাদার। একজন প্রভাবশালী নেতার পরিচয়ে বড় কাজগুলো হাতিয়ে নিয়ে নামমাত্র কাজ করে বিল তুলে নেয়ার মতো একাধিক ঘটনা রয়েছে। ভয়ে কেউ এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতনা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এসব ঠিকাদারকে এখন পাকশীতে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

রেলওয়ের প্রকৌশলী দফতরের করা ২০১৭, ১৮ ও ১৯ সালের ৫৫টি কাজের বিষয়ে গত ২৯, ৩০ ও ৩১ অক্টোবর খোঁজখবর নেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। আর এতেই আতঙ্কিত রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় অফিসের প্রকৌশলী বিভাগসহ কয়েকটি দফতরের কর্মকর্তা, অফিস সহকারী, প্রধান হিসাব অফিস ও ঠিকাদাররা।

মামলার ভয়ে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত দুর্নীতিবাজ ঠিকাদাররা। আবার কয়েকজন ঠিকাদার দুদক কর্মকর্তাদের সামনে পড়ার ভয়ে পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিআরএম) কার্যালয়ের আমতলা চত্বর ছেড়েছেন।

দুদক পাবনা অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক আতিকুর রহমান জানান, বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তথ্যের ভিত্তিতে রেলওয়ে পাকশী অফিসগুলোর অধীনে ঠিকাদারদের মাধ্যমে করা কাজগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে বড় কিছু কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত চলাকালে এর বাইরে বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

রেলওয়ের কয়েকজন ঠিকাদার ও রেলওয়ে কর্মচারীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দুই দফা শাসনামলে দলীয় কিছু ঠিকাদার জেলার প্রভাবশালী নেতার নাম করে টেন্ডার ছাড়াই কোটি কোটি টাকার কাজ করেছেন। অথচ এসব কাজে টেন্ডার হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। রেলওয়ের রেস্ট হাউস, ডিআরএম বাংলো মেরামত, রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ (ডিইএন-১) বাংলো নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ ও মেরামত করার কাজ করা হয়; যা ছিল নিম্নমানের। নামে মাত্র কাজ। আর মেরামতের কাজ না করেই ক্ষমতার দাপটে পুরো বিল বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ও অফিসের প্রধান সহকারীর মাধ্যমে তুলে নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি পাকশী রেলওয়ে হাসপাতালের প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে চুনকাম শেষ হয়েছে। বিলও উত্তোলন করা হয়েছে। যা দিয়ে হাসপাতালের ওই রকম একটা নতুন ভবণ নির্মাণ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু তা না করে চুনকাম করা হয়েছে। মেরামত করা দেয়াল ও ছাদের পলেস্টার খুলে পড়তে শুরু করেছে।

তারা আরও জানান, একই হাসপাতালে মূল্যবান কাঠের আসবাপত্র, চেয়ার, টেবিল ফেলে দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকার অটোবি আসবাবপত্র কেনা হয়েছে। রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি অফিসের অধীনস্থ এলাকার সকল পুকুর নামমাত্র পাঁচ লাখ টাকায় টেন্ডার নিয়ে অন্তত কয়েক কোটি টাকায় বিক্রয় করা হয়েছে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে আসা উপলক্ষে একই রেস্ট হাউজ দুই দফা মেরামতের নামে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ঠিকাদার। রাস্তাগুলো মেরামতের নামে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি টাকা। রেলওয়ের কর্মচারীদের পোশাক (ইউনিফর্ম) নিম্নমানের দিয়ে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এক ঠিকাদার।

বর্তমানে পাকশীতে রেলওয়ের কয়েকটি রাস্তার মেরামত কাজ চলছে। যে রাস্তার কাজ কিছুদিন পূর্বেও করা হয়েছে মর্মে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এভাবে রেলওয়েতে চলছে হরিলুট।

রেলওয়ের একাধিক কর্মচারী অভিযোগ করে জানান, রেলওয়ের প্রতিটি অফিসে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। অবসরকালীন ভাতা তোলার জন্য কাগজপত্র করতে গেলেও অফিসে টাকা দিতে হয়। রেলওয়ের সবচেয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি চলে প্রকৌশল-১ (ডিইএন-১), প্রকৌশলী-২ (ডিইএন-২), সহকারী মুখ্য প্রকৌশলী অফিস (এইএন), হিসাব অফিস, ভূ-সম্পত্তি অফিস, ডিএমই লোকো- ক্যারেজ ও ইলেকট্রিক্যাল, ডিএমও- হাসপাতাল এবং ডিপিও অফিসে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের দেয়া চিঠি সম্পর্কে কিছুই জানা নেই বলে দাবি করেন রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আহসান উল্যা ভূঁইয়া। তবে রেলওয়ের অপর এক কর্মকর্তা জানান, দুদক প্রথমে তিন বছরের করা সংস্কার ও নির্মাণ কাজের মধ্যে থেকে ৫৫টি কাজের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।