অপরাধ ও দুর্নীতি ১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০৪:০১

জাবিতে র‌্যাগিংয়ের নামে শারীরিক নির্যাতন

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুমগুলোই হয়ে ওঠে টর্চার সেল।

অশ্লীল ভাষায় গালাগাল, কান ধরে উঠ-বস, দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা এমনকি সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে বাধ্য করার নামে চলে র‌্যাগিং। সে সাথে গণরুমগুলো হয়ে ওঠে টর্চার সেল। এভাবেই নতুন শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর দীর্ঘদিনের অভিযোগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন শিক্ষকরাও। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, র‌্যাগিং বন্ধে কঠোর অবস্থানে তারা।

দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বলে খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তাই উচ্চ শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের পছন্দের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠানটি। তবে,র‌্যাগিং এর নামে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় বারবারই শিরোনাম হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়।

রসায়ন চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তন্বী। স্বপ্ন নিয়ে জাহাঙ্গীরনগরে ভর্তি হলেও প্রথম ধাক্কা আসে র‌্যাগিং এর কবলে পড়ে।

তিনি বলেন, র‌্যাগিং এর সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে শারীরিক এবং মৌখিক ভাষা ব্যবহার করা হয় তা নতুন কোন শিক্ষার্থীর জন্য মানসিকভাবে খুবই সমস্যা করে। সিনিয়রদেরকে আমাদের অনেক বেশি নত স্বীকার করে চলতে হবে তাহলেই আমরা হলে সিট পাবো।

তন্বীর মত নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুলের অভিজ্ঞাতও একই। বলছে রাত ১২টার পর গণরুমগুলোতে শুরু হয় এই নির্যাতন।

র‌্যাগিং এর শিকার হওয়া রাকিবুল বলেন, আমি ভার্সিটি আসার পর তারা জানছে যে আমি একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এজন্য আমার গায়ে পানির বোতল ছুঁড়ে মারছে, নেতা হবি প্রতিবাদি হবি এসব অনেক ধরনের কথাই বলছে। নতুন শিক্ষার্থীদের প্রথম চার পাঁচ মাস যেভাবে তাদের স্বাধীনতা হরণ করে, পরে তারা যে এর প্রতিবাদ করবে সেটার সাহসটা আর থাকে না।

শিক্ষার্থীরা বলছে, র‌্যাগিং এর ঘটনায় বেশীরভাগ সময় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনগুলো নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। তাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন কোন পদক্ষেপ নিতে চান না।

বিষয়গুলো স্বীকার করে শিক্ষকেরা বলছেন, অনেকসময় তারাও অসহায় হয়ে পড়ে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, কখনও কখনও ক্ষমতাসীন শিক্ষকরাও প্রচ্ছন্নভাবে এসব শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করে। যদি কোন হলে শিক্ষার্থীদের র‌্যাগ দেয়া হয় তখন যদি ওই হলের প্রশাসন সঠিক ভূমিকা পালন না করে সেটি তো একধরনের মদদ দেয়াই।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের  অধ্যাপক ড. তারেক রেজা বলেন, হলগুলোতে যেসব গণরুম আছে সেগুলোই মূলত টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ বছর যারা র‌্যাগিং এর শিকার হয় তাদের ভিতরে যে প্রতিশোধের যে স্পৃহা তৈরি হয় সেটি পরবর্তীতে আরও বিস্ফোরিতভাবে প্রকাশ পায়।

তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন বলছে র‌্যাগিং এর নামে শারীরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে তারা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল বলেন, আমরা এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্সে আছি,তারপরও যদি কোথাও র‌্যাগিং হয়ে থাকে প্রক্টরিয়াল বডি সঙ্গে সঙ্গেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিছুদিন আগে একটি ছেলেকে মেরে কান ফাটিয়ে দিয়েছে, এই ঘটনায় আমরা একদিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।

গত বছর র‌্যাগিং এর শিকার হয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রাহমান মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।