ডেস্ক রিপোর্ট ।।
আওয়ামী যুবলীগ অফিসের পিয়ন থেকে দফতর সম্পাদক বনে যাওয়া ধনাঢ্য কাজী আনিসুর রহমান সম্পর্কে নানা মহলে মুখরোচক আলোচনা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার পর তিনি একাধিক গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির মালিক হয়েছেন। ক্যাসিনো ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড় শুরুর পর গত রবিবার থেকে তিনি লাপাত্তা। কোটিপতি আনিস যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ছাড়া কাউকে পরোয়া করতেন না। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এ আনিসের কাছেই থাকত যুবলীগের সব লেনদেনের খাতা। তার সঙ্গে কথা না হলে কোনো কমিটি হতো না। আবার কেউ আনিসের আবদার পূরণ করতে ব্যর্থ হলে নেমে আসে বহিষ্কারের খড়গ।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ভাবড়াসুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের ফায়েকুজ্জামান কাজীর চার সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে কাজী আনিসুর রহমান। ২০০১ সালে ঢাকায় এসে জীবিকার তাগিদে প্রথমে পোশাক তৈরির কারখানায় চাকরি নেন। শারীরিক পরিশ্রম করতে না পারায় চাকরি ছেড়ে দেন আনিস। যোগ দেন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমান পবনের প্রাইভেট ফার্মে। সেখান থেকে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসা-যাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে সেখানে সহায়ক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর কিছু দিন পরই দায়িত্ব পান কম্পিউটার অপারেটরের।
এরপর যা হয়েছে তা আলাউদ্দিনের চেরাগ পাওয়ার মতো ঘটনা। পিয়ন থেকে সাত বছরে হয়ে যান যুবলীগের দফতর সম্পাদক। আর চাকরি হওয়ার সময় যার বেতন ছিল ৫ হাজার টাকা সেই পিয়ন আনিস এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। ঢাকায় রয়েছে একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও গাড়ি। রাতারাতি এমন বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন কমিটি বাণিজ্য, প্রভাব বিস্তার করে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেওয়াসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে। তিনিই যুবলীগের সিন্ডিকেটের হর্তাকর্তা। অবৈধ ক্যাসিনো ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর গত রবিবার থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ তিনি। তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি অবস্থান সম্পর্কেও কিছু জানা যাচ্ছে না। তবে গত মঙ্গলবার তার স্বাক্ষরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে। যুবলীগের নেতারা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশি না হলেও স্মরণ শক্তি ভালো।
পিয়ন ও কম্পিউটার অপারেটরের দায়িত্ব পালনের সময় সারা দেশের যুবলীগের সব কমিটির তালিকা তৈরি করতে গিয়ে সব তথ্য তার নখদর্পণে চলে আসে। মুখস্থ বলে দিতে পারতেন যে কোনো কমিটির নেতার নাম। এসব কারণেই চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান তিনি। ২০০৫ সালের পিয়ন, ২০১২ সালে প্রথমে উপ-দফতর সম্পাদক। এর ছয় মাস পর তাকে দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জানা গেছে, প্রথমে পুরান ঢাকায় মেসে থাকতেন আনিস। পরে পরিবার নিয়ে টিকাটুলী এলাকায় দুই রুমের ভাড়া বাসায় থাকেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়ার পর চেয়ারম্যানের কাছাকাছি থাকার জন্য ধানমন্ডিতে ভাড়া বাসা খোঁজেন। কিন্তু ভাড়া না নিয়ে ১৫ নম্বর সড়কে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনে নেন। বর্তমানে তিনি সেখানে থাকেন না। এখন রাজধানীর ধানমন্ডির ১০/এ সড়কের এক বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকেন কাজী আনিস। এ ফ্ল্যাটও তার ক্রয় করা। এ ছাড়াও ঢাকায় একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট রয়েছে আনিসের। শুধু ঢাকাতেই নয়, গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বোয়ালিয়া গ্রামে গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। পেট্টলপাম্পসহ অনেক জমি কিনেছেন আনিস।
গ্রামের লোকজন জানিয়েছে, আনিস যুবলীগের পদ পাওয়ার পরই উত্থান শুরু। পেট্রলপাম্প প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন। পাশেই পাঁচ একর জায়গা আছে তাদের কেনা। এ ছাড়া ঢাকায় আনিসের তিনটি বাড়ি রয়েছে। সম্পদের বিবরণী পেয়ে তার অর্থের উৎস সম্পর্কে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, দরপত্র থেকে কমিশন ও যুবলীগের বিভিন্ন কমিটিতে পদ-বাণিজ্য করেই বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন কাজী আনিস।
এছাড়াও জানা গেছে, পিয়ন থেকে নেতা বনে যাওয়া এই আনিস বিভিন্ন সময়ে নানাজন থেকে টাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় পদ দিয়েছেন। জেলা কমিটি না দিয়ে উপজেলা ও পৌর কমিটি দিয়েও অর্থ নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। গত সাত বছরে সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য করতে সাবেক ছাত্রনেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ থেকে কোটি টাকা। আবার যারা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের পদ দিতে নেওয়া হয় বিপুল পরিমাণ টাকা। দলীয় নেতারা বলছেন, সারা দেশে যুবলীগের অপরাধের সিন্ডিকেটের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক এই আনিস। তাকে ধরলে সব বেরিয়ে যাবে। সেজন্য হয়তো তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন।






















