নিজস্ব প্রতিবেদক
মহামারী করোনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত দুই হাজার ৫০০ টাকার নগদ সহায়তা পেতে প্রত্যেক সুবিধাভোগীকে ঘুষ দিতে হয়েছে গড়ে ২২০ টাকা। নগদ সহায়তার তালিকাভুক্ত হতে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে ১২ শতাংশ সুবিধাভোগী।
আজ মঙ্গলবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) আয়োজিত এক অনলাইন সভা "করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলয়ায় চ্যালেঞ্জ: দ্বিতীয় পর্বের গবেষণা" প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার মো. জুলকারনাইন।
চলতি বছরের ১৬ জুন থেকে ৩১ অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত এক গবেষণা চালায় টিআইবি। সেখানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অর্থ প্রণোদনার অনিয়মের বিষয়ে দেশের ৩৫টি জেলার এক হাজার ৫০জনের বক্তব্য নিয়েছে টিআইবি। এছাড়া ওএমএস কার্ডে অনিয়মে আরও ৩২ জেলার ৯৬০ জনের মতামত নিয়েছে টিআইবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তালিকাভুক্ত হতে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে ১২ শতাংশ সুবিধাভোগী। সুবিধা পেতে প্রভাবশালী ব্যক্তির সুপারিশ জোগাড় করা (৩৬ দশমিক এক শতাংশ), অনুনয়-বিনয় (২৪ দশমিক ৬ শতাংশ), নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ বা ঘুষ দেওয়া (১৮ দশমকি ৯ শতাংশ), টাকা না পাওয়া (১০ দশমকি ৬ শতাংশ) ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এছাড়া তালিকাভুক্ত হতে অর্থ বা ঘুষ দিতে হয়েছে গড়ে ২২০ টাকা।
অন্যদিকে কার্ডের মাধ্যমে ওএমএস (চাল) বা ১০ টাকা কেজি দরে চালের তালিকাভুক্ত হতে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছিল ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তির সুপারিশ জোগাড় করা (৩৭ দশমিক এক শতাংশ), অনুনয়-বিনয়/অনুরোধ করা (২০ দশমিক ৬ শতাংশ), অর্থ বা ঘুষ দিতে হয়েছে ১৫দশমিক ৫ শতাংশকে।
নগদ সহায়তায় অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছিল উপকারভোগীদের ৫৬ শতাংশ। তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও এখনো টাকা না পাওয়া (৬৯ দশমিক শূন্য শতাংশ), মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট কর্তৃক কমিশন/ফি কেটে রাখা (২৬ দশমকি ৬ শতাংশ) সহ নগদ টাকা তুলতে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট কমিশন/ফি বাবদ গড়ে ৬৮ দশমিক ২০ টাকা করে কেটে রাখে।
এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হয়।
জরিপে ওএমএস (চাল) সহায়তায় অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছিল সুবিধারভোগীদের ১৫ দশমিক শতাংশ। অনিয়ম ও দুর্নীতির ধরনের মধ্যে ছিল, পরিমাণে কম দেওয়া (৩৬ দশমকি ৮ শতাংশ), তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও চাল কিনতে না পারা (২০ দশমকি ৬ শতাংশ), ওজন না করে বালতিতে অনুমান করে চাল দেওয়া (১৯ দশমকি ৯ শতাংশ) ইত্যাদি।
নগদ সহায়তা কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান/মেম্বার/কাউন্সিলর (৭৯ দশমকি ২ শতাংশ) ও স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা (৪৮ দশমকি ৭ শতাংশ)।
বিশেষ ওএমএস (চাল) বিতরণ কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে সংসদ সদস্য, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান/মেম্বার/কাউন্সিলর (৬৫ দশমকি ৭ শতাংশ) ও স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার (৪০ দশমকি ১ শতাংশ) সম্পৃক্ততা ছিল বলে জানায় সুবিধাভোগীরা। যাদের বিরুদ্ধে দুনীতির প্রমাণ মিলেছে, তাদের ৯০ জনই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিল।