সারাদেশ ১৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০৬:৩৩

পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট শনাক্তে মাঠে গোয়েন্দারা

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

স্মরণকালের সর্বোচ্চ দামে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। গতকাল ১৫ নভেম্বর, শুক্রবার রাজধানীতে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি যেন এরকম সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটের দিকে আঙুল তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন তাদের শনাক্তে মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা দল।

জানা গেছে, বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে গঠিত এসব গোয়েন্দা দল এখন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তার নানা বেশে সিন্ডিকেটের সদস্যদের খোঁজ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এমন সংবাদ জানিয়েছে জাগরণ।

ওই কর্মকর্তা জানান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দলকে মাঠে নামানো হয়েছে। তারা রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, কাপ্তান বাজারসহ একাধিক বাজারে নজরদারি চালাচ্ছেন। আরেকটি দল নজর রাখছেন চট্টগ্রামের চাকতাই ও খাতুনগঞ্জে। খুব শিগগিরই সিন্ডিকেটের সদস্যদের শনাক্ত করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের আড়তে সম্প্রতি অভিযানে যায় বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল। এ দলে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল জানান, অভিযানে তারা বিভিন্ন দোকানে পেঁয়াজের বিপুল মজুত দেখেছেন। কিন্তু দাম কমাচ্ছে না তারা। 

তার ভাষ্য, মজুদ থাকার পরও সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দামের বাড়ানো হচ্ছে। যাদের কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। সিন্ডিকেট চিহ্নিত হলে অবশ্যই তারা সাজা পাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইকারি ও খুচরা বাজার কোথাও পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। বিদেশ থেকে আমদানিও অব্যাহত রয়েছে। চাহিদামাফিক পেঁয়াজ থাকার পরও কেন দাম বাড়ছেই, এর নেপথ্যে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করার উপর জোর দেন তারা।

বাজারে সরকারি তত্ত্বাবধানের অভাবেই মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থির করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন তারা। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মাত্রাতিরিক্ত লাভ-লোভের মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। 

তারা অভিযোগ করেন, ঢাকাসহ দেশের বড় বাজারগুলোতে দৃশ্যত সঠিক মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। ভারত হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও দূরদৃষ্টির পরিচয় দিতে পারেনি। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার কার্যকর কোনো কৌশলই নিতে পারেনি তারা। 

শ্যামবাজার পেঁয়াজ-রসুন সমিতির প্রচার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘৭৮টি পেঁয়াজের আড়তের মধ্যে কেবল আটটি আড়তে পেঁয়াজ রয়েছে। দেশের বাজারে প্রতিদিন চাহিদা কমপক্ষে ২০০ ট্রাকের। আসে মাত্র ১০০-১২৫ ট্রাক। ঘাটতি থাকে ৭০-৮০ ট্রাক পেঁয়াজ।’

প্রতি ট্রাকে সাধারণত ১৫ টন পেঁয়াজ আসে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘টিসিবি ইচ্ছা করলে আমদানি করতে পারে। এতে দাম কমত। এখন শুধু বেসরকারিভাবে আমদানি করা হচ্ছে।’

এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে যখন ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় সঙ্গে সঙ্গে আমরা সরকারকে বললাম, সরকারি ও বেসরকারিভাবে আমদানি এখনই করতে হবে। নতুবা ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেবে। সরকার আমাদের কথায় গুরুত্ব দেয়নি।’ সাধারণ ভোক্তারা তারই ফল ভোগ করছে বলে ভাষ্য তার।