জেলা প্রতিনিধি
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে ইভটিজিং করাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
আহতদের মধ্যে চারজনকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের অনেকে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটস্থ আমবটতলা বাজারে এ সংঘর্ষের শুরু হয়। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, একজন নারী শিক্ষার্থী আটবটতলা বাজারে এক দোকানে গেলে সেই দোকানদার তাকে উত্ত্যক্ত করে। এরপর ওই নারী শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের জানালে কয়েকজন শিক্ষার্থী সেই দোকানদারকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। একপর্যায়ে দোকানদারকে মারধর করা হয়। এরপর আশপাশের মানুষ শিক্ষার্থীদের মারধর করে। পরবর্তীতে এ ঘটনা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এরপর বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের এক মেয়ে জুনিয়র জানায় যে, মোবাইল ঠিক করতে গেলে দোকানদার তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে। এটা শোনার পর আমরা দোকানদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে, আশপাশের স্থানীয় লোকজন মিলে আমাদের ওপর হামলা চালানো শুরু করে। আমাদের কিল-ঘুষি দিতে থাকে। পরে আমরা কোনো রকম দৌড়ে পালিয়ে আসলে তারা পেছন থেকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি চেষ্টা করলেও তারা ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে এ সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরবর্তীতে রাত ৯টার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এরপর আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারারসহ আরও অনেকে। এদিকে ঘটনার তিন ঘণ্টা পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে তাদেরকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা।
হামলায় আহত দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন ও সাব্বির আহমেদ জানান, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আমাদের ওপর স্বশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হঠাৎ ক্যাম্পাসে ঢুকে সামনে যাকে পেয়েছে তাকেই পিটিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর মাথা ফেঁটে গেছে।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. ওমর ফারুক বলেন, একটি ছাত্রীকে ইভটিজিং করাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ ঘটে। আমাদের প্রক্টরিয়াল বডিসহ অনেক শিক্ষক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসতে দেরি করায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। সংঘর্ষে আমাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের একাংশ ভিসি স্যারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা শুনে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ওমর ফারুক বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার-পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি শান্ত হলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে চৌগাছা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে তারা।





















