আমাদের কাগজ ডেস্কঃ অনলাইনে ফাঁদ এ আর নতুন কি! এমনটি ভেবে অপরাধ জগতে লিপ্ত হয়েছেন। শাকিল (২৪) ও রনি (৩৮)। যারা সম্পর্কে শ্যালক-দুলাভাই। সম্প্রতি,চাঁদপুর থেকে এই হ্যাকার চক্রকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
জানা যায়, তারা ঘরে বসে ডার্ক ওয়েবের বিভিন্ন সাইট থেকে ই-মেইলের পাশাপাশি ভিসা, মাস্টারকার্ড ও পেপালসহ বিভিন্ন ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহে ছিলেন বেশ পটু। এসব তথ্য ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আইডি হ্যাক করে এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেন। অনলাইন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে জেলও খেটেছেন। কিন্তু জামিনে বের হয়ে ফের শুরু করেন প্রতারণা।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বিভিন্ন কার্ডের তথ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের পণ্য (আইফোন, ইলেক্ট্রনিকস ও কসমেটিকস পণ্য) অনলাইনে অর্ডার করতেন এই প্রতারক চক্রের সদস্য শ্যালক-দুলাভাই।
তবে সম্প্রতি,জার্মানি-ভিত্তিক একটি কার্গো কোম্পানির সার্ভার ও ই-মেইল আইডি হ্যাক করে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আইপি অ্যাড্রেস বিশ্লেষণ করে এবং অভিযান চালিয়ে চাঁদপুর থেকে হ্যাকার চক্রের মূলহোতা (দুলাভাই) মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান রনি (৩৮) ও তার সহযোগী (শ্যালক) মো. মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাকিলকে (২৪) গ্রেফতার করেছে।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, তিনটি মোবাইল ফোন, তিনটি সিম কার্ড ও একটি রাউটার জব্দ করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, গ্রেফতার হওয়া মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান রনি ডার্ক ওয়েব থেকেই কারকন গ্রুপের (জার্মানি) বাংলাদেশ প্রতিনিধির ই-মেইলের তথ্য পান। এই তথ্য দিয়ে তিনি কোম্পানির ই-মেইল অ্যাড্রেসে ঢুকে জার্মানিতে অবস্থিত মূল কোম্পানির কাছে খরচ বাবদ চার হাজার ৮০০ ডলার চেয়ে ই-মেইল করেন।
যেভাবে প্রতারক হয়ে ওঠেন রনি
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, এই প্রতারক চক্রের মূলহোতা মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান রনি। তার বাবা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানায় বসবাস করেন। তবে রনির জন্ম হয় ঢাকার তেজগাঁও এলাকায়। রনির বয়স যখন ৫-৬ বছর, তখন তার মা-বাবার মধ্যে বিয়েবিচ্ছেদ ঘটে।
মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান ওরফে রনি তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া হোসেন আলী হাই স্কুল থেকে ২০০০ সালে ব্যবসায় শাখা থেকে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০০০-২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। একই সঙ্গে রানী মার্কা ঢেউটিনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজও করেছেন।
পরে রনি ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি অনলাইন ও ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে পুরাতন কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ কেনা-বেচার কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি চকবাজার থেকে কসমেটিকস কিনে এনে সেগুলো ঢাকার গাউছিয়া ও নিউমার্কেটে বিক্রি করত।
২০২২ সালের ১ আগস্ট রনি জামিনে মুক্তি পান। পরে তার শ্যালক মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাকিলকে সঙ্গে নিয়ে পুনরায় ই-মেইলের পাশাপাশি ভিসা, মাস্টারকার্ড, পেপালসহ বিভিন্ন ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেন। আইফোন, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ও উন্নতমানের কসমেটিকস পণ্য প্রতারণার মাধ্যমে তিনি বিদেশি নাগরিকদের তথ্য ব্যবহার করে অর্ডার করতেন।
আমাদের কাগজ/এমটি





















