সারাদেশ ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:০৯

জীবন্ত সাপ-ব্যাঙ-ইঁদুর কাঁচা খান ‘ডিসকভারি আকরাম’

 'ডিসকভারি আকরাম' নামে পরিচিত পাবনা জেলার আকরাম প্রামানিক।ছবি : সংগৃহীত

'ডিসকভারি আকরাম' নামে পরিচিত পাবনা জেলার আকরাম প্রামানিক।ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের ঘোড়াদহ গ্রামের বসিন্দা আকরাম। জ্যান্ত সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর ও মাছসহ নানা পোকামাকড় খেয়ে পাবনাজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছেন আকরাম প্রামানিক (৫০)। ডিসকভারি চ্যানেল দেখে এসব খাওয়া রপ্ত করেছেন বলে স্থানীয়রা তার নাম দিয়েছেন ‘ডিসকভারি আকরাম’। বিয়ে করেছেন ৩০ বছর আগে  স্ত্রী গৃহিণী। চার কন্যা সন্তানের বাবা তিনি।

ডিসকভারি আকরাম বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, ২০০২ সালে একটি সাদাকালো টেলিভিশন কিনে ডিসকভারি চ্যানেল দেখা শুরু করেন। সেখানে নিয়মিত বিদেশিদের পোকামাকড় খাওয়া দেখতেন তিনি।

তিনি আরও জানান, ২০০৩ সালে তাজা কাঁকড়া খাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি কেঁচো, কাঠের পোকা, সাপ, কুচিয়া, তেলাপোকা, ইঁদুর, বিভিন্ন প্রজাতির কাঁচা মাছ, গোবরের পোকা, শামুক, ঝিনুকসহ নানা পোকামাকড় খাওয়া আয়ত্ত করা শুরু করেন।

এখন তিনি যেকোনো  তাজা ও কাঁচা খেতে পারেন বলেন দাবি করেন। এগুলো খাওয়ায় তার শরীরের মধ্যে কোনো রোগ বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি তিনি এসব পোকামাকড় খেতে পারেন। কোনো সমস্যা হয় না।

একটা সময় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন আকরাম। পরে বিভিন্ন সরকারিভবনের ইন্টেরিয়রের কাজে মনযোগী হন। জানা গেছে, বর্তমানে সব কাজকর্ম ছেড়ে তিনি পোকামাকড় খাওয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। অভাবী সংসারে বিষয়টিকে নানাভাবে দেখছেন পরিবারের স্বজনসহ আশপাশের মানুষ। পোকামাকড় খাওয়ায় এখন তিনি পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

এটি তার কোনো রোগ কিনা, তা জানতে নিজেই আগ্রহী হয়েছিলেন আকরাম। তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে গিয়েও লাভ হয়নি, কেউ তাকে সঠিক পরামর্শ দেয়নি বলে জানিয়েছেন আকরাম।

ডিসকভারী আকরামের জানান, তিনি একজন দরিদ্র মানুষ। খুব কষ্টে তার সংসার চলে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আরও দুই মেয়ে রয়েছে। তারা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়ালেখা করে। সরকারি-বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং সঠিক গাইডলাইন পেলে তিনি দেশে থেকে বিদেশিদের মধ্যে আলোড়ন তুলতে চান।

ডিসকভারি আকরামের স্ত্রী মুর্শিদা খাতুন বলেন, ‘৩০ বছরের সংসার জীবন। ২০-২২ বছর আগে তাকে এই নেশায় ধরে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি পোকামাকড় খাওয়া চ্যানেল দেখে এটা অভ্যাস করতে থাকেন। এটা এখন তার ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হয়েছে। পোকামকড় খাওয়া নিয়ে আমার স্বামীর বা আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

প্রতিবেশি আমিরুল বলেন, ‘ও একটা আজব মানুষ। গোবর পোকা, কাঠের পোকা, কেঁচো থেকে শুরু করে সব ধরনের পোকা খাওয়ায় বেশ পারদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন আকরাম।’

এ ব্যাপারে পাবনার বেসরকারি সিমলা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. সরোয়ার জাহান ফয়েজ বলেন, ‘প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ বিভিন্ন প্রাণী কাঁচা খেত। যুগের পরিবর্তনে স্বাদের জন্য রান্না করে খায়। গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি না থাকলে তেমন ক্ষতি হয় না মানবদেহের জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো একটু ব্যতিক্রমী। নিজেকে জাহির করার জন্য আজকাল মানুষ অনেক কিছুই করে। যদি তিনি সেই লক্ষ্যে করেন, তাহলে তাকে সেই পরামর্শ দেওয়া দরকার যে কোনো প্রাণীর কোনটুকু খাওয়া যাবে, কোনটুকু খাওয়া যাবে না।’

আমাদেরকাগজ/এএইচ