সারাদেশ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০১:৩১

ছাত্রলীগ নেতা মুসা যেভাবে নবীগঞ্জের ত্রাস হয়ে উঠলেন

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

নবীগঞ্জে পুলিশের উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলাকারী নবীগঞ্জ পৌর এলাকার শহরতলী সালামতপুর গ্রামের খুর্শেদ মিয়ার ছেলে শাহ সোহানুর রহমান মুসা সবার কাছে সন্ত্রাসী মুসা ও মাদক ব্যবসায়ী হিসাবেই পরিচিত। আর অপর পরিচয় হলো তিনি একজন খুনি।

ছোট বেলায় মা ও বাবার সাথে সৎ ভাইকে হত্যার মাধ্যমে অল্প বয়সেই অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন মুসা। পরে নবীগঞ্জের জনপ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা হেভেন হত্যার সাথেও জড়িত ছিলেন তিনি। মুসা সৎ ভাইকে হত্যা দায়ে জেল কেটে এসেই এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সোহানুর রহমান মুসা নামটি শুনলেই যেন সাধারণ মানুষ আঁতকে উঠেন। প্রতিনিয়তই শহর এবং বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা সাথে লিপ্ত হয়ন তিনি। এছাড়া ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সহ- সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৪ সালে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা হেভেন চৌধুরীকে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা চালিয়ে হত্যার মাধ্যমে আবারো শহরসহ হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে আলোচনা আসেন মুসা। দলের নেতৃবৃন্দ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মুসা কোন সময় দল করতেন না। এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতার আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে তিনি সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি পদ পেলেও সেই কমিটি জেলা থেকে অনুমোদন পায়নি। এর আগে এবং পরে রাজনীতির সাথে জড়িত নয় মুসা। একজন সন্ত্রাসী, মোটরসাইকেল চোর, চাঁদাবাজ, ডাকাত এবং মাদক ব্যবসায়ী হিসাবেই সবাই তাকে চিনে। নবীগঞ্জে সন্ত্রাসী মুসা নামে পরিচিতি পান তিনি।

আলোচিত মুসার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। মুসা চোরাই মোটরসাইকেল এবং গাড়ী বিক্রির সিন্ডিকেটের সাথেও জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি পুলিশ ও র‌্যাব যৌথবাহিনী সন্ত্রাসী মুছার পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেন। রাত প্রায় সাড়ে ১২ টা থেকে পৌনে ২ টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় যৌথ বাহিনী। এ সময় মুসার স্বীকারোক্তিতে ৫৬৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

এক বছর পূর্বে মুসা প্রকাশ্য দিবালোকে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের হীরা মিয়া গার্লস স্কুলের সামনে অস্ত্র দেখিয়ে ৩টি দোকানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাটসহ ৩টি মোটর সাইকেলসহ ৭ লাখ টাকা মালামাল লুট করে নিয়ে যান বলে জানা যায়। এ ঘটনার কয়েক দিন আগে গত ১২ ডিসেম্বর বিকালে মুসা তার গ্রামের শ্রমিক নেতা হেলাল আহমদের বাড়ির চলাচলের সীমানায় বেড়া দিয়ে ওই পরিবারের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেন।

এ বিষয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসআই সুজিত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে মুসা ও তার পরিবারের সদস্যদের রোষানলে পড়েন। এক পর্যায়ে মুসাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলেও তার হুমকি ধমকিতে ফিরে আসতে বাধ্য হয় পুলিশ।

মুসা সাম্প্রতিক সময়ের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নবীগঞ্জ শহরে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, মুছা এখন শহরের একটি আতঙ্কের নাম। অভিযোগ রয়েছে, মুছা তার চাচা নিজাম উদ্দিনের বাড়িঘর জোরপূর্বক দখল, ফিশারির মাছ লুট, কয়েক লক্ষাধিক টাকার গাছ জোরপূর্বক কেটে বিক্রি করে। এর প্রতিবাদ করায় ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তার চাচাদের হুমকি দেন। প্রাণের ভয়ে তারা বাড়িঘর ছাড়া রয়েছে। গত বছর ইয়াবাসহ শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ তাকে আটক করে।

সবশেষ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মুসাকে ধরতে শহরের সালামতপুর এলাকায় ব্র্যাক অফিসের কাছে তার দোকান যান নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) উত্তম কুমার ও উপ-পরিদর্শককে (এসআই) ফখরুজ্জামান। তখন মুসা দোকান থেকে বেরিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় ওসি উত্তম কুমারকে সিলেটে পাঠানো হয়।