নিজস্ব প্রতিবেদক
বই প্রেমিদের নিয়ে ময়মনসিংহ, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলায় পৃথক মতবিনিময় সভা করেছে পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষদ। গত শুক্রবার ময়মনসিংহ এবং পরের দিন শনিবার সকালে নেত্রকোনায় ও বিকেলে শেরপুরে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার সকালে নেত্রকোনা জেলায় পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষদ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ ইমাম হোসাইন এর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় সাংসদ মিস হাবিবা রহমান খান শেফালী।
প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ এর সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশ এর ট্রাস্টি ও বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষদ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য জনাব মালিক খসরু পিপিএম।
এসময় বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হতে চললেও কার্যত অবহেলিত রয়ে গেছে দেশের গণমানুষের বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত গ্রামে গঞ্জে গড়ে উঠা পাঠাগার গুলো। রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পাবলিক লাইব্রেরি। কিন্তু সরকারি সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও তদারকির অভাবে বিলুপ্ত হতে বসেছে এই মেঠো পথের বাতিঘরগুলো।
বক্তারা আরো বলেন,জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র গত ৬০ বছরে নামে মাত্র দেখভাল করে আসছে গ্রামের পাঠাগার গুলো কে। যদিও বর্তমান পরিচালক দেশের বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক জনাব মিনার মনসুর মহোদয় দায়িত্ব নেওয়ার পরে পরিবর্তন হতে শুরু হয়েছে এই অবহেলিত সেক্টর টি।
বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সোনার বাংলা গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম খালিদ, এমপি মহোদয় এর নেতৃত্বে দেশে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের গ্রামীণ পাঠাগার গুলোর উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে আমরা সমগ্র দেশের পাঠাগার উদ্যোক্তাদের সংগঠিত করছি।
দেশের পাঠাগার গুলো কে বেগবান করতে ও বাঁচাতে প্রতিটি সচল গ্রামীণ পাঠাগারে একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন অফিস সহায়ক নিয়োগ দেওয়ার বিকল্প নেই।
সমগ্র দেশের ২৫০০ হাজার পাবলিক লাইব্রেরি উদ্যোক্তাদের প্রাণের দাবি এটি৷ বর্তমানে দেশে ১৮ কোটি মানুষ রয়েছে। তাদের শিক্ষার গুণগত মান ও সৃজনশীল মেধা গঠনে দেশে এই মুহুর্তে প্রয়োজন ৬০ হাজার পাবলিক লাইব্রেরি। সে তুলনায় মাত্র ৫% পাবলিক লাইব্রেরি আছে আমাদের ১৮ কোটি মানুষের জন্য।
আজ যুব সমাজের অবক্ষয় ও মেধাহীন জাতি তৈরি হচ্ছে শুধু মাত্র গ্রামীণ জনপদের পাবলিক লাইব্রেরি গুলো সক্রিয় না থাকায়।
প্রতিবছর রাষ্ট্র কয়েক কোটি টাকার অনুদান দিচ্ছে পাঠাগার গুলোকে। কিন্তু ৯৫% পাঠাগার বন্ধ থাকায় বই পাঠ করতে পারছে না সাধারণ পাঠক সমাজ। কেননা গ্রামীণ পাবলিক লাইব্রেরি গুলো যে সকল উদ্যোক্তাগণ গড়ে তোলেছেন তারা নিজের জীবন জীবিকার তাগিদে সারাদিন নিজ পেশাভিত্তিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন বলে নিজ পাবলিক লাইব্রেরিটি নিয়মিত খোলা রাখতে পারেন না। অনেক পাবলিক লাইব্রেরি আছে যে গুলো কেবলমাত্র বিভিন্ন অনুষ্ঠান কেন্দ্রিক খোলা রাখা হয়।
অনুষ্ঠানে আগত সকল অতিথি বৃন্দ সরকারের কাছে আহ্বান জানান, সরকার যেন অন্তত একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন অফিস সহায়ক রাজস্ব খাতের অধীনে স্থায়ী নিয়োগের ব্যবস্থা নেন। তবেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নত বাংলাদেশে উন্নত গ্রাম ও সোনার মানুষ তৈরি হবে।
আমন্ত্রিত অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন, ববিতা পাঠাগার এর সভাপতি বাধন খান পাঠান ববি। জাতীয় তরুণ সংঘ ও শিল্পকলা পাঠাগারের সভাপতি মনি রাণী কর্মকার সহ জেলা সকল বেসরকারি গণগ্রন্থাগার এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বৃন্দ।
পরে জেলার নবগঠিত কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি হন হাবিবা রহমান খান শেফালী, এম.পি এবং সাধারণ সম্পাদক হন আজিজুর রহমান।
শেরপুর জেলাঃ একই দিন বিকাল ০৪ টায় "শেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তন" এ এক অনুষ্ঠানের মধ্যে শেরপুর জেলার সকল বেসরকারি গণগ্রন্থাগার এর উদ্যোক্তাদের নিয়ে "বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে বইয়ের ভূমিকা " শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অত্র আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উস্থিত ছিলেন জনাব মালিক খসরু পিপিএম, সাবেক এআইজি,বাংলাদেশ পুলিশ ও ট্রাস্টি, পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশ।
সভায় বক্তারা দেশে একটি যুগোপযোগী গ্রন্থাগার আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে আলোচনা করেন। বিশেষ করে দেশের ২৫০০ টি বেসরকারি গণগ্রন্থাগার কে বাঁচাতে ও পাঠাগার এর আলো পাঠকদের নিকট পৌঁছে দিতে রাষ্ট্রীয় খরচে একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন অফিস সহায়ক নিয়োগ দেওয়ার জন্য জোর দাবি করা হয়।
দেশের যুব ও ছাত্র সমাজ করে বইয়ে ফেরাতে ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সোনার বাংলার সোনার মানুষ গড়তে দেশের প্রতিটি গ্রামে একটি করে পাঠাগার সৃষ্টির জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নিতে ৬৪ জেলায় আলোকিত মানুষ দের সংগঠিত করতে বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষদ ও পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশ এর নেতৃবৃন্দ গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছেন। আজ ৫০ তম জেলা হিসেবে শেরপুর জেলা সফর করেছেন নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করেছেন কে এম খালিদ, এমপি কে এবং দেশের পাঠাগার গুলোর তদারকির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান "জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র" এর পরিচালক জনাব মিনার মনসুর কে দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে সমগ্র দেশের পাঠাগার গুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। পাল্টে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার চিত্র, গড়ে উঠছে আমরা বইপড়ার আলোকিত সমাজ।
সভার শেষ পর্যায়ে শেরপুর জেলার পাঠাগার আন্দোলনকে বেগবান করতে ও স্থানীয় সকল বেসরকারি গণগ্রন্থাগার এর আন্তঃযোগাযোগ শক্তিশালী করতে ২১ সদস্যদের একটি কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।
এতে শেরপুর জেলা নবগঠিত কমিটির সভাপতি হয়েছেন পল্লী সাধারণ পাঠাগার এর সভাপতি মোঃ মাইনুল হক আনোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন জয় পাঠাগারের সভাপতি জনাব আফজাল হোসেন ।উপস্থিত সকল বেসরকারি গণগ্রন্থাগার উদ্যোক্তা নবগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দ কে স্বাগত জানান।
এতে সভাপতিত্ব করেন জনাব মোঃ ইমাম হোসাইন, উদ্যোক্তা ও সভাপতি, পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষদ। অনুষ্ঠানে অংশ নেন শেরপুর জেলার ত্রিশ উর্ধ্বো বেসরকারি গণগ্রন্থাগার এর উদ্যোক্তাগণ ও শেরপুর জেলার বিশিষ্ট নাগরিক বৃন্দ।
ময়মনসিংহ জেলাঃ এর আগের দিন শুক্রবার ময়মনসিংহ জেলাতেও বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগারের উদ্যেগে আলোচনা সভার আয়োজন করে। উক্ত আলোচনা সভাতেও বক্তারা বাংলাদেশের গ্রামীণ পাঠাগারগুলোর যথাযথ তদারকি এবং নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার মধ্যদিয়ে যুবসমাজকে সঠিক পথে আসার প্রতি গুরুত্ব দেন। পাশাপাশি সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।






















