রাজনীতি ২৮ জুলাই, ২০১৯ ১১:৩৬

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ডিএসসিসি মেয়রকে ওবায়দুল কাদের: কথা না বলে কাজে মনোনিবেশ করা উচিত

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ডেঙ্গুকে সহজভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। আমরা অনেক সময়ই দায়িত্বহীন কথাবার্তা বলে থাকি। সবার দায়িত্বপূর্ণ কথা বলা উচিত। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের কাজে মনোনিবেশ করা উচিত। তারা দুজনেই যেটা বলেছেন, সেটা তাদের নিজেদের মতামত হতে পারে। কথা না বাড়িয়ে যার যার কাজে মনোনিবেশ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করেন তিনি।

শুক্রবার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডেঙ্গু মোকাবেলায় সামাজিক লড়াই গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই বিপজ্জনক মশা যে মৃত্যুর কারণ হতে পারে, তা সহজভাবে দেখার কোনো উপায় নেই। যারা এটা নিয়ে আতঙ্ক ছড়ান তাদেরকেও বলব, আসুন আমরা সকলে মিলে একটা সামাজিকভাবে লড়াই গড়ে তুলি।

ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধিতে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কোনো দায় বা ব্যর্থতা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা চেষ্টা করছেন। আমি বলব তারা যাতে আরও বিভিন্নভাবে তাদের কর্মকাণ্ড জোরদার করে। শুধু ওষুধ ছিটালে হবে না। ডেঙ্গু মশা যেখানে জন্ম হয় এবং যে আবাসস্থল গড়ে ওঠে, সেগুলো প্রটেকশন দেয়া এবং কার্যকর ওষুধ ছিটানোর ব্যাপারটাও দেখতে হবে। ওষুধ যথাযথভাবে ছিটানো হচ্ছে কিনা সেটার ব্যাপারে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা দরকার বলেও মনে করেন সেতুমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন দেশে নেই। কাজেই আমাদের সবারই বিশেষ করে যারা মন্ত্রিসভায় আছেন, দায়িত্বশীল নেতা যারা আছেন, সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন, কথাবার্তাতেও আমরা যেন তাৎক্ষণিক মন্তব্য না করি। এ ব্যাপারে আমি আমার সকল পর্যায়ের সম্মানিত কলিগ, সহকর্মী এবং নেতৃবৃন্দকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ জানাই।

চীন, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে গেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা এখন শুধু দেশীয় সমস্যা নয়। দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবেও প্রকোপ বাড়ছে। সেজন্য আমাদের এটাকে উপেক্ষা করার কোনো কারণ নেই। আমাদের জনগণ ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগে আছে, আতঙ্কে আছে। কাজেই আমাদের জনগণকে এই কঠিন রোগ থেকে এবং ডেঙ্গু মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে হবে।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণকে বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর অফিসও এ ব্যাপারে খুব সক্রিয়। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে একটা মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। দুই সিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন মিলে ডেঙ্গু মোকাবেলার কাজটি সমন্বিতভাবে করতে হবে মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, যারা সংশ্লিষ্ট তাদের সবারই একটা দায়িত্ব এখানে রয়েছে। আমরা মনে করি আমাদের দলেরও একটা দায়িত্ব রয়েছে।

এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার মনে হয় রাজনৈতিকভাবেও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতনতামূলক এবং সতর্কতামূলক সভা-সমাবেশ করতে হবে। আমাদের দলও এ ব্যাপারে অংশ নেবে।

গুজবের কারণে গণপিটুনির ঘটনা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে- দাবি করে সেতুমন্ত্রী বলেন, এটাকে পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এজন্য আওয়ামী লীগের সারা দেশের সব শাখাকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশনা দিয়েছি। যাতে আমাদের সবাই মিলে এই বিষয়টি নিয়ে সভা-সমাবেশ করে সতর্কতামূলক ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করে জনগণকে সতর্ক করে। যাতে এই ধরনের আইন হাতে নেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি না পায়। আইন হাতে নেয়ার প্রবণতা কিছুদিন থেকে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল সেটা এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে, এটাকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে দায়িত্ব রয়েছে-এমন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আমরা একদিকে সতর্কতামূলক-সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করব। অন্যদিকে আমাদের বন্যার ব্যাপারেও ভাবতে হবে। কারণ কোথাও কোথাও পানি কমে গেলেও উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে আবার নতুন করে পানি বাড়ছে। যমুনাসহ বিভিন্ন নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে খবর পাচ্ছি। গণমাধ্যমেও খবর এসেছে।

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কেবলমাত্র বিএনপির মতো ‘লিপ সার্ভিস’ এবং প্রেস ব্রিফিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। প্রেস ব্রিফিংয়ের মধ্যে তাদের ত্রাণ তৎপরতা সীমিত। তারা কোথাও মাঠে গিয়ে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে- এমন কোনো খবর পত্রপত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখিনি। যে যাই করুক আমরা সরকারে আছি, আমরা সরকারি দল, আমাদের দায়িত্ব বেশি। কাজেই আমাদের দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে। আমাদের নেতাকর্মীদেরও ডেঙ্গু মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। গুজব যাতে না ছড়ায়, গুজব রটিয়ে গণপিটুনির মতো আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার যে অশুভ প্রবণতা বন্ধ করার ব্যাপারে আমাদের দলেরও দায়িত্ব আছে এবং সরকারি দল হিসেবে আমরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করব।

প্রিয়া সাহার বক্তব্যের সঙ্গে ছেলেধরা গুজব কোনো সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে একটা স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; ‘এজ হোল’-এর সঙ্গে জড়িত এটা আমরা মনে করি না। আমার মনে হয় এই ব্যাপারটি নিয়ে নিউজের কলেবর বাড়ানো উচিত নয়। কারণ দেশে অনেক সমস্যা এখন আছে। বন্যা আছে, ডেঙ্গু আছে। এসব বিষয় নিয়ে বেশি আমার মনে হয়, মাথাব্যথার কারণ। এখন প্রিয়া সাহা আমাদের মাথাব্যথার কারণ নয়। আমাদের মাথাব্যথার কারণ হল বন্যায় মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। ডেঙ্গুতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই শত শত লোক হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এই বিষয়গুলোকে আমরা এখন ফোকাসে আনব। এখন প্রিয়া সাহা কোনো ফোকাসের বিষয় নয়।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আর মনে হয় স্পেস নষ্ট না করাই ভালো। আমরা মশা মারতে কামান দাগাতে চাই না। আপনাদের কাছেও আমার অনুরোধ ‘রেসপনসিবল’ সাংবাদিক হিসেবেও আপনারা মশা মারতে কামান দাগাবেন না, এ বিষয়টি আর বাড়াবাড়ির কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের অনেক কাজ আছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, উপ-দফতর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।