এআই ক্যামেরা রয়েছে দেশে সংযোজিত রাস্তায়, সাদা দাগ পেরলেই অটো মামলা
আমাদের কাগজ ডেস্ক : যানজট কমানো ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে ইন্টারসেকশন ট্রায়াল বেসিসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (এআই) সিগন্যাল সিস্টেম বসানো হয়েছে ঢাকার গুলশান-২ সিগন্যালে। যার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে সব ধরনের গাড়ির গতিবিধি। এছাড়া কম্পিউটার সফ্টওয়্যার প্রোগ্রামগুলি ব্যবহার করে এআই ক্যামেরার থেকে অডিও এবং চিত্র বিশ্লেষণ করা হবে। যার দ্বারা সিগন্যাল ছাড়ার আগে-পরে কতগুলো গাড়ি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছে তা দেখা যাচ্ছে এআই ক্যামেরায়।
সবশেষ তথ্য বলছে, গত এক মাসে শুধু এই সিগন্যালে ট্রাফিক আইন ভেঙেছে তিন লাখ গাড়ি। রাজধানীর ১৭টি পয়েন্টে প্রাথমিকভাবে এ পদ্ধতি চালু করা হবে। চালু হলে মামলা হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। যা মূলত বাহিরের দেশ গুলোতে বেশি প্রচলিত রয়েছে।
যানজট কমানোসহ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় একাডেমী শৃঙ্খলা আনতে চায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
ডিএনসিসির তথ্য বলছে, গত এক মাস এ এলাকার গাড়ি চলাচল পর্যবেক্ষণ করে যে তথ্য পাওয়া গেছে সেটা ভয়াবহ। আইন ভেঙেছে তিন লাখ বাহন। সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে আইন ভঙ্গের হার বলছে, এ সিস্টেম চালু হলে রাজধানীজুড়ে একদিকে ভয়াবহ যানজট কমবে, অন্যদিকে যত্রতত্র পার্কিং কিংবা ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার প্রবণতাও কমবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে তখন সিগন্যাল সিস্টেম শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে সেভাবে ঢাকার রাস্তা বাড়ছে না। বরং অনেকাংশে রাস্তা কমছে। যানজটের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি যেমন হচ্ছে তেমন কর্মঘণ্টাও বাড়ছে। ঢাকা শহরে বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ছুটির দিনেও রাস্তায় চলাচল করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভালো না হলে, ঢাকার যতই উন্নয়ন হোক না কেন তা কাজে আসবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছে, যেখানে পুলিশ সদস্যরা হাত দিয়ে গাড়ী থামান। এআই চালু হলে সেটা আর দেওয়া লাগবে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ঢাকা শহরে ২০২০ সালে নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ২৫৪টি, ২০২১ সালে এক লাখ ৫০ হাজার ৫৬১টি, ২০২২ সালে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৮১২টি এবং চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৮৭ হাজার ৩৬২টি।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে মোটরসাইকেল, এক লাখ ২০ হাজার ৮৪৮টি। এরপরে রয়েছে প্রাইভেটকার ১৪ হাজার ৯৪৬টি, জিপ গাড়ি ৯ হাজার ৩৫০টি এবং মাইক্রোবাস রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৬ হাজার ৬৯৫টি।অর্থাৎ, বিআরটিএর পরিসংখ্যানেই দেখা যায়, প্রতি বছর ঢাকা শহরে হু হু করে বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। কিন্তু সেই তুলনায় তৈরি হচ্ছে না নতুন রাস্তা। বিআরটিএর রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও ঢাকা শহর দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে আরও অনেক গাড়ি।
ঢাকার বেশকিছু সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, হাত দিয়ে ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামার সিগন্যাল দেওয়ার পরেও অনেক গাড়ি সিগন্যাল ভেঙে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে ও চলেও যায়। অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা দৌড়ে গিয়ে মামলা দেন, আবার অনেক সময় চালক পালিয়ে গেলে মামলা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর কারণে নানা অসুবিধায় পড়ছে বাকি সুবিধা বঞ্চিত যানবাহন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সিগন্যাল মেনটেন্যান্স সরঞ্জাম, সিসি ক্যামেরা, ইমেজ ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা ও অন্য সরঞ্জমাদি দিয়ে এই সিস্টেম চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ঢাকা শহরের প্রতিটি পয়েন্ট এআই-এর আওতায় আনা হবে।
গুলশান-২ নম্বর সিগন্যালে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, লালবাতি জ্বলা অবস্থায় সাদা দাগ অতিক্রম করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রাফিক মামলা হবে। এ প্রযুক্তির ফলে অনেকেই সচেতন হয়েছেন। এতে ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রবণতা কমে আসবে ৯৯ শতাংশ। লালবাতি জ্বলা মাত্র সবাই সতর্ক হয়ে যাবেন। এই আধুনিক ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক পুলিশের কষ্টও কমে আসবে অনেকাংশে। যার মাধ্যমে জ্যম নিরসন ও দ্রুততা আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের একদিকে যেমন কাজের চাপ কমবে অন্যদিকে এই সিস্টেমের আওতায় আনতে পারলে ঢাকার যানজটও কমে আসবে। এতে আর হাত দিয়ে গাড়ী থাকাতে হবে না বরং আইন অমান্যকারী দ্রুত মামলার আওতায় আসবে ।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা বলেন, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি হয়েছে। এই কমিটি একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এআই প্রযুক্তিসম্পন্ন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত হবে। এটি প্রাথমিকভাবে চালু হবে গুলশানসহ ১৭টি পয়েন্টে। এরপর বাকি রাস্তায় আনা সম্ভব হবে বলে ব্যক্ত করেন তিনি।
আমাদেরকাগজ/এমটি