নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা কারণে আলোচিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গরিব-দুঃখী ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটি সর্বমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। মানব সেবায় তাদের ভালো ভালো কাজ দেখে দেশ-বিদেশ থেকে এসেছে বহু মানুষের বিপুল অর্থ সহায়তা।
মানুষের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার অর্থ দিয়ে বিদ্যানন্দ ১ টাকায় আহারসহ নানা সেবামূলক কর্মসূচি পালন করে। রমজান মাসে তারা বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ, গরু জবাই করে সুবিধাবঞ্চিতদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া বিভিন্ন করোনা মহামারিসহ নানা প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে তারা বিভিন্নভাবে সুবিধা বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি এ প্রতিষ্ঠানটি নানা কারণে মানুষের সমালোচনার মুখে পড়েছে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। বঙ্গবাজারের পোড়া কাপড় দিয়ে অলঙ্কার তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয় বিদ্যানন্দ। পোস্ট দেওয়ার পর ছবিগুলো নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
দেখা যায়, ছবিগুলো অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে বঙ্গবাজারের আগুনে পোড়া কাপড়ের অলঙ্কার বলে চালিয়ে দেয় তারা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এক পর্যায়ে বিদ্যানন্দ বাধ্য হয়ে নিজেদের ভুল স্বীকার করে নেয় এবং এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চায়।
এরপরও বিদ্যানন্দকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় থামেনি, তা আরও বাড়ছে। বিদ্যানন্দের নতুন-পুরোনো অনেক পোস্ট নিয়ে অনলাইনে চলছে সমালোচনা ও ট্রল। বিশেষ করে গরু জবাই করে সুবিধা বঞ্চিতদের খাওয়ানোর একাধিক পোস্টে একই গরুর ছবি বারবার ব্যবহারের অভিযোগ করছেন সমালোচকরা।
৬ মাস বা ১ বছর আগের একই রকম কয়েকটি পোস্ট-এর স্ক্রিনশট নিয়ে মানুষ ফেসবুকে পোস্ট করছে আর প্রশ্ন করছে একই গরু কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন সময় বিদ্যানন্দ জবাই করেছে? এছাড়া ‘মজিদ চাচা’ নামে একটি নাম নিয়েও চলছে ট্রল। বিদ্যানন্দ বিভিন্ন সময়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষজনকে সহযোগিতা করার পর ‘মজিদ চাচা’ নামটি ব্যবহার করেছে। মানুষের প্রশ্ন, এ ‘মজিদ চাচা’ কে? যার নাম বার বার বিভিন্ন সময় সহযোগিতার নামে ব্যবহার করছে বিদ্যানন্দ। এছাড়া বিদ্যানন্দের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
অনেকে পরিষ্কার অভিযোগ এনে বলছেন, বিদ্যানন্দ আসলে চ্যারিটির নামে দাতাদের অর্থ আত্মসাৎ করছে। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক কোনো স্বচ্ছতা নেই।
এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির হেড অব কমিউনিকেশনস সালমান খান ইয়াসিন গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যানন্দকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মানুষ বিদ্যানন্দের কার্যক্রমকে বিশ্বাস করবে কি না তা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। অনলাইনে আমাদের নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে এটা আমরা জানি। এটা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। যেহেতু বিদ্যানন্দ চ্যারিটির কাজ করে, প্রতিষ্ঠান অনেক বড় হয়েছে, অনেকে হয়তো এটা সহ্য করতে পারছেন না। এ জন্যই বিদ্যানন্দের বিষয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে।
গরুর ছবি নিয়ে কী বক্তব্য?
সালমান খান ইয়াসিন বলেন, আমরা তো বলছি না ছবিতে ব্যবহার করা গরুটি আমরা আজ জবাই করে খাওয়াচ্ছি। আমরা যদি তথ্য শেয়ার করতাম তাহলে সেটা মিথ্যা হতো। আমরা এখানে একটা গল্প শেয়ার করছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা গল্পের জন্য ব্যবহার করতে একটি ছবি ইন্টারনেট থেকে নেব নাকি আমাদের কালেকশনে থাকা ছবি থেকে নেব। নেট থেকে নিলে বলবে আমরা অন্যের ছবি নিজেদের বলে চালিয়ে দিয়েছি।
যেমন, এখন একটি এতিম বাচ্চাকে নিয়ে গল্প বলা হচ্ছে। ছবিতে বলা হয় ওই বাচ্চাটা এতিম এবং সে ইফতার খাচ্ছে। যখন এতিমখানার বাচ্চাদের নিয়ে কোনো পোস্ট করছি তখন ওই এতিম বাচ্চাটার ছবি ব্যবহার করছি। আবার যখন ইফতার নিয়ে পোস্ট করছি, তখনও সেই ছবিটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করছি। কারণ ছবিতে ওই বাচ্চাটা ইফতারও খাচ্ছে। এখানে আমাদের দোষটা কোথায় সেটা বুঝতে পারছি না। মানুষ আসলে ভুলভাবে এসব বিষয় ব্যাখ্যা করছে।
প্রসঙ্গ যখন ‘মজিদ চাচা’
সালমান খান ইয়াসিন বলেন, আমাদের ফেসবুক পেজে যা লিখি তা অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো ফর্মাল বা আনুষ্ঠানিক কিছু নয়। আমরা লিখি মানুষের দুঃখ দুর্দশা ও বঞ্চনার গল্প। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে আমরা এই গল্পগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করি। আমরা যখন মাঠে-ঘাটে কাজ করতে যাই, তখন এসব গল্প আমরা পাই। সেসব মানুষের চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে সরাসরি নাম ব্যবহার না করে প্রতীকী নাম ব্যবহার করি। এমন কিছু নাম ব্যবহার করা হয় যে নামগুলো সবার পরিচিত। যাতে মানুষ নামগুলো পড়ে নিজেদের সঙ্গে মেলাতে পারে। তেমন একটি নাম মজিদ চাচা। এই নামটি সবার সঙ্গে পরিচিত নাম। সে জন্য আমাদের বিভিন্ন গল্পে প্রতীকী অর্থে মজিদ চাচার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতীকী নামের বিষয়ে বিভিন্ন সময় আমরা বলেছি। আমরা এমন নাম ব্যবহার করি যেন কোনো বিতর্কের সৃষ্টি না হয়।
আমাদেরকাগজ/এইচএম