জাতীয় ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০৯:১৩

কম দামে কাপড় বিক্রি করছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের পাশে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের ফাঁকা জায়গায় চৌকি, টেবিল বা ত্রিপল বিছিয়ে কাপড় বিক্রি করতে শুরু করেছেন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে যারা এক টুকরো মালামালও বের করতে পারেনি তারা মহাজনের কাছ থেকে কন্ডিশন (বিক্রির পর টাকা দিবে) ভিত্তিতে মালামাল নিয়ে বিক্রি করছেন। আবার অনেকেই উদ্ধার করা অবশিষ্ট মালামাল নিয়ে বসেছেন।

এসব ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে সব শার্ট পাঞ্জাবি এবং প্যান্ট তারা মার্কেটে ৫০০, ৭০০ কিংবা ৮০০ টাকায় বিক্রি করতেন, সেগুলো ফুটপাতে অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে পারছেন না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ক্রেতারা এখানে ব্যবসায়ীদের বিপদের সুযোগ নিচ্ছেন। যে কারণে তারাও কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।  

বঙ্গবাজারের বিপরীত পাশের রাস্তায় ফায়ার সার্ভিস অফিসের পাশের ফুটপাতে পাঞ্জাবি বিক্রি করছিলেন আরাফাত হোসেন বাপ্পী। পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার মার্কেটে নিচ তলায় শাহাদাত পাঞ্জাবি (১২৮২, ১২৮৩ নম্বর দোকান) এবং বিসমিল্লাহ চয়েজফুল গার্মেন্টস (১৩৬৪, ১৩৬৫ নম্বর দোকান) নামে দুইটি দোকান ছিল তার। যার মধ্যে একটি ভাড়া এবং অন্যটির পজিশন কেনা ছিল, যা সম্পূর্ণ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আরাফাত হোসেন বাপ্পী বলেন, আমাদের এই ব্যবসাটা হচ্ছে সিজনাল ব্যবসা। আমরা ১২ মাসের ভেতর নয় মাসই লস টানি। রোজা এবং কোরবানির ঈদের এই তিন মাসের লাভ দিয়ে আমরা পুরো বছর চলি। নতুন যত ইন্ডিয়ান প্রোডাক্ট ছিল, এগুলো উঠানোর পর দোকান ভরা।  যে সময়টা বেচা-বিক্রি মাত্র শুরু করব, এমন সময় আগুনটা লেগে সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। দোকানের ক্যাশ বাক্সে আগের দিন বাসায় যাওয়ার আগে সাতলাখ টাকা রেখে গিয়েছিলাম। আগুন লাগার পর একটা মালও বের করতে পারি নাই। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।  

অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রি করছেন এমন অভিযোগ তুলে তিনি আরও বলেন, যে মাল বঙ্গবাজার থাকা অবস্থায় পাইকারি ৭০০-৮০০ টাকা বিক্রি করতাম, সেগুলো এখন ৩৫০ বা ৪০০ টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়ে যায়। 

ব্যবসা করার জন্য ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে আমার দুটি ব্যাংক থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার লোন নেওয়া ছিল। এ ঈদ উপলক্ষে মাল উঠাবো বলে লোন নিয়েছিলাম। এছাড়াও দুই দোকানে প্রায় দেড় কোটি টাকার মতো মালামাল ছিল। এখন আমার আর কোন পুঁজি নাই।  

ফুটপাতে বসার জন্য পুঁজি কিভাবে পেলেন বা ব্যবসা কেমন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন নতুন কিছু মাল কারখানা থেকে কন্ডিশনে এনে বিক্রি করছি। সারাদিন বসেও কাস্টমার পাই না। আর কাস্টমাররা যে দাম বলছেন তাতে লাভ তো দুরের কথা উলটো লস হয়। তবে পরিবার নিয়ে ঈদে চলতে হবে। তাই লস দিয়ে হলেও মাল বেচে টাকা ক্যাশ করতে হবে। কারণ কেউ তো আমারে এখন ক্যাশ টাকা দেবে না।

এদিকে বঙ্গবাজার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ২৯৬১ জন তালিকাবদ্ধ ব্যবসায়ী পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে পুনরায় বরাদ্দ পাবেন। আমরা এ তালিকা সিটি করপোরেশনে জমা দিয়েছি। আগামী বুধবারের (১২ এপ্রিল) মধ্যে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে বুলডোজার দিয়ে সমান করে দোকানিদের বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। সাড়ে তিনফুট বাই পাঁচ ফুট চৌকি বসানো হবে। যারা মাল আনবেন তাদেরই বসতে দেওয়া হবে। আর কারও যদি চারটা দোকানে থাকে তিনিও একটা চৌকি পাবেন। এখানে তালিকার বাহিরে অন্য কোনো ব্যবসায়ী আসার সুযোগ নাই।
  

আমাদেরকাগজ/এইচএম