জাতীয় ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৬:০৮

পবিত্র জমজমের পানি চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে ঢাকায়

আমাদের কাগজ রিপোর্ট: মুসলিম উম্মাহর কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সর্বোত্তম পানি হচ্ছে জমজম কূপের পানি। সৌদি আরবে পবিত্র কাবাঘর থেকে ২১ মিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে জমজম কূপের অবস্থান।

যারা হজ্ব বা ওমরাহ করতে যান তারা গেলে পান ওযু-গোসলের জন্য পানি ব্যবহারের সুযোগ পান। ফেরার সময়ও পরিবার-পরিজনের জন্য তারা পানি সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। সৌদি আরবে ব্যবহারের সময় বা দেশে আনার সময় লিটারের সিল করা বোতলের জন্য ১০ রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৮২ টাকা) ব্যয় করতে হয়। তবে ছোট বোতল এবং খোলা পানির জন্য কোনো টাকা দিতে হয় না।

কিন্তু অবাক করা চিত্র দেখা গেল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মার্কেট এলাকায়। খোদ ঢাকার রাজধানী প্রাণকেন্দ্রে চড়া মূল্যে ঢাকায়ই জমজমের পানি বিক্রি হচ্ছে। লিটারপ্রতি জমজমের পানির জন্য গুণতে হচ্ছে অন্তত সাড়ে তিন হাজার টাকা। পরিস্থিতি ও দাম দেখে চোখ কপালে উঠার জোগাড় হলেও জমজমের পানি বিক্রির ওপর কর্তৃপক্ষের নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ দেখা যায় না।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মার্কেট এলাকায় অন্তত আড়াইশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কীভাবে পানি সংগ্রহ করা হচ্ছে, কীভাবে এটি সারা বছর ধরে বিক্রি হয় কিংবা এতে সাধারণ পানি মেশানো হচ্ছে কি-না, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে তারা নারাজ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকার গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব ইমরানুল বারী সিরাজী খানিকটা ভিন্ন সুরে বলেন, জমজমের পানির বিক্রি জায়েজ বৈধ। ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি হচ্ছে, যেকোনো বৈধ মালিকানাধীন বস্তুর বেচাকেনা জায়েজ বৈধ।

হাদিস অনুযায়ী জমজমের পানি পান করার কিছু নিয়ম-রীতি আছে। যেমন: পানের আগে কিবলামুখী হয়ে বিসমিল্লাহ বলা, তিন নিঃশ্বাসে পান করা, শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা ইত্যাদি। জমজমের পানি পান করার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল আল্লাহর কাছে দোয়া করা।

তিনি আরো বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি হাদিয়াস্বরূপ (উপহার) জমজমের পানি পান, তখন তিনি মালিক হয়ে যান। মালিকানার জিনিসের বেচাকেনা ইসলামি শরিয়তে বৈধ।

বায়তুল মোকাররমের নিচতলায় একটি ছোট দোকান চালানো মো. হারুন (৬৫) বলেন, আমি হাজিদের উন্নতমানের এহরামের কাপড়, টাওয়ালসহ জায়নামাজ, আতর, টুপি ইত্যাদি বিক্রি করি। এর পাশাপাশি জমজমের পানি বিক্রি করি। তিনি আরও বলেন, জমজমের পানির অনেক চাহিদা। কিন্তু আমরা সেই অনুযায়ী চাহিদা মেটাতে পারি না। আমরা হজ করতে যাওয়া মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পর্যাপ্ত সম্মানি দিয়ে জমজমের পানি সংগ্রহ করি।

মো. হারুন জানান, পাঁচ লিটারের সিল করা বোতল তিনি তিন হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করেন। কিন্তু জমজমের পানি কিনতে কত খরচ হয়, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি।

জমজমের পানি বিক্রি করা আরেক দোকানদার মোহাম্মদ উল্লাহ (৪০) বলেন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় অন্তত আড়াইশ দোকানদার জমজমের পানি বিক্রি করে। তবে কেউই নিয়মিত বিক্রি করতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, অনেকে হাজিদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে জমজমের পানি সংগ্রহ করেন। আবার অনেকে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করেন। আমরা তাদের সম্মানি দেই। পরবর্তীতে আমাদের আর দোকানের খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা জমজমের পানি বিক্রি করি।

মোহাম্মদ উল্লাহর ভাষ্যমতে, প্রায় সব দোকানেই ২৫০ মিলি জমজমের পানি ৩০০-৩৫০ টাকা খুচরা দরে বিক্রি করা হয়। পাইকারিতে পরিচিত মানুষের কাছে ২০০-২৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। তবে দুই-একজন দোকানদারের কারণে অনেকে বিশ্বাস করতে চান না যে এটা জমজমের পানি।

বায়তুল মোকাররম এলাকার মোবারক আলী নামে আরেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, কিছু ব্যবসায়ী সাধারণ পানির সঙ্গে জমজমের পানি মিশিয়ে বিক্রি করেন। কিন্তু খুব কম দোকানদারই এই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করেন। যাদের ইসলাম সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান আছে, তারা কখনোই ধরনের জঘন্য কাজ করতে পারে না।

জমজমের পানি কিনতে আসা মাওলানা ইসহাক বলেন, মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ পানি জমজম। যে উদ্দেশ্যে জমজমের পানি পান করা হবে, তা পূরণ হবে। যদি রোগমুক্তির জন্য পান করা হয়, তাহলে মহান আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দেবেন। আমরা এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তাছাড়া, এর আগে অনেক উপকার হয়েছে। এর ফলও পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, জমজম থেকে পানি পানকারী ব্যক্তির জন্য সুন্নত হলো পুরোপুরিভাবে জমজমের পানি ইবাদত মনে করে পান করা উচিত। কিন্তু এর যে দাম সেজন্য আসলে তৃপ্তি সহকারে খাওয়া যায় না।

 

 

 

আমাদের কাগজ/টিআর