জাতীয় ১৩ অক্টোবর, ২০২২ ১০:১৮

প্রথম নির্বাচনই বন্ধ: ইসির বার্তা কি?

কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন ছিল তার নেতৃত্বাধীন প্রথম কোন সংসদীয় আসনের নির্বাচন। গতকাল বুধবার ভোটগ্রহন শুরুর পর বেলা আড়াইটার দিকে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে তা বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দেন। তবে এ ঘোষণায় কি বার্তা পৌঁছে দিলে ইসি সেই প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট অনেকের মনে?

তবে ইসির এ সিদ্ধান্তকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সাধুবাদ  জানিয়ে সরকারের দিকে ছুড়ে দিয়েছে সমালোচনা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচন বন্ধের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-মিছিল করেছে। দলটির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ইসির সমালোচনাও করেছেন।

‘নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে উল্লেখ করে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, ভোট গ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কোনো একটি পক্ষ বা কোনো একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রভাবিত করতে পারছেন। ফলে, আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয়েছে, ভোট গ্রহণ নিরপেক্ষ হচ্ছে না।’ নির্বাচন সঠিকভাবে হচ্ছে না, তা হলে একটি কেন্দ্র বা সব কেন্দ্রে নির্বাচন বন্ধ করার দায়িত্ব কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। সেই বিধানের আলোকে আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’

এদিকে ইসির ঘোষণার আগেই দুপুর সাড়ে ১২টায় জাতীয় পার্টির এএইচএম গোলাম শহীদ রঞ্জু (লাঙল), বিকল্পধারা জাহাঙ্গীর আলম (কুলা), স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল) ও স্বতন্ত্র সৈয়দ মাহবুবুর রহমান (ট্রাক) নানা অনিয়ম এবং কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। ভোটর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর ওই চার প্রার্থী সাঘাটা উপজেলার বগারভিটা স্কুল ভোটকেন্দ্রের সামনে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। এ সময় তারা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবগত করেন।

তবে নির্বাচন বন্ধের পর ইসির সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নৌকার কর্মী সমর্থকরা। তারা দলে দলে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের সামনে রাস্তায় এসে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও ভোট বর্জন ছিল পূর্বপরিকল্পিত। তাদের দাবি ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র ছিল আগে থেকেই। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নৌকা প্রতীক সংবলিত গেঞ্জি গায়ে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে ভোট বানচাল করে দেয়।

ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভোট স্থগিত ঘোষণার পর সাধারণ ভোটাররা হতবাক। আমার ধারণা একটি কুচক্রিমহল পরিকল্পিতভাবে সিইসিকে বিভ্রান্তকর তথ্য দেওয়ায় নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হলো।

এদিকে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে কোনো কেন্দ্রেই নৈরাজ্য হয়নি। ইসি ঢাকায় নির্বাচন ভবনে বসে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এতগুলো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতের সিদ্ধান্ত ইসি কীভাবে নিল, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।’

এদিকে, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের নির্বাচন বন্ধে ইসিকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় পুনরায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধা-০৫ আসনের উপনির্বাচনে সকাল থেকেই প্রায় শতভাগ কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টদের জোর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা।’ এজন্য আমরা জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা, গাইবান্ধা-০৫ আসনে তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’

সরকার কর্তব্য পালনে ব্যর্থ উল্লেখ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-এর সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ‘উপনির্বাচনে ইসিকে অসহযোগিতা করে সরকার সাংবিধানিক কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে। একটিমাত্র উপনির্বাচনে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে কয়েক প্লাটুন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, আনসার সদস্য ছাড়াও ১২৮৫ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্বে থাকার পরও নির্বাচনে কারচুপি ফেরানো যায়নি। তা হলে ৩০০ আসনের নির্বাচনে ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার অক্ষম।’

উল্লেখ্য, গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮ জন। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান, জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনীত এ এইচ এম গোলাম শহীদসহ উপনির্বাচনে পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি বুথে ভোটগ্রহণ করার কথা ছিল ইভিএমের মাধ্যমে।

আমাদের কাগজ/ ইদি