ডেস্ক রিপোর্ট।।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৪তম প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯৭৬ সালের এ দিনেই তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বিএসএমএমইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই ‘বিদ্রোহী কবি’। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলও কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে গমন, পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ। পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে একক বত্তৃতার আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমী। বিকাল ৪টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো কাজী নজরুল বিদ্রোহে যেমন থরোথরো কাঁপিয়েছেন, তেমনি প্রেম-ভালবাসা-বিরহের দ্যোতনা তৈরি করে গেছেন নিজের সাহিত্যকর্মে। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে তিনি যে ঢেউ বাংলা সাহিত্যে তুলেছেন, তার প্রবাহিত ধারা এখনো নাড়া দিয়ে যায় সকল সাহিত্যামোদী বাঙালিকে।
বাংলা সাহিত্যের ‘বিদ্রোহী’ এই কবি সব্যসাচী ভূমিকা রেখেছেন আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে। একাধারে তিনি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকেও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার রচিত গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। তার ক্ষুরধার লেখনী ছিলো মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার, প্রভূত্ব, অধর্মের চর্চা এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উভয় বাংলার সাহিত্যামোদীর কাছে সমানভাবে সমাদৃত তার কবিতা ও গান।
বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নেন কাজী নজরুল ইসলাম। পিতা কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুনের সংসারে তার ডাকনাম ছিলো ‘দুখু মিয়া’।
দুঃখ-কষ্টেই কেটেছে দুখু মিয়ার শৈশব। পিতার মৃত্যুকালে তার বয়স মাত্র নয় বছর। পারিবারিক অভাব-অনটনে তার শিক্ষাজীবন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। মাত্র দশ বছর বয়সেই তাকে জীবিকা সন্ধানে পথে নামতে হয়। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরই তাকে আবার কাজে ফিরে যেতে হয়। কষ্টের মাঝেই অতিবাহিত হয় তার বাল্য জীবন। অর্থনৈতিক সমস্যা তার জীবনে এসেছে বারবার।
বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুলের অবদান অসামান্য। অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী ও সাম্যের এই কবি আছেন কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে। জীবদ্দশায় তিনি সর্বদা হিন্দু-মুসলমান মিলনের গান গেয়েছেন। তার রচিত ইসলামি সঙ্গীত ও গজল আজও মানুষের হৃদয় কাড়ে। পাশাপাশি তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন শ্যামাসঙ্গীত রচনার ক্ষেত্রেও।
বাংলা কবিতায় তিনি এনেছিলেন সম্পূর্ণ নতুন এক সুর, ছিলেন মানবতার উচ্চকণ্ঠ প্রচারক, গানে মিশিয়েছিলেন বিচিত্র ধারা। নজরুলের চেতনা ও আদর্শ বাঙালির জীবনে চিরন্তন, বাংলাদেশের উত্থান-পতনময় সংগ্রামী ইতিহাসে অবিস্মরণীয়।
মধ্যবয়সে তিনি আক্রান্ত হন বিরল পিকস ডিজিজে। হারিয়ে ফেলেন বাকশক্তি। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ উদ্যোগে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।



















