কৃষি ১৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০২:১৭

পেঁয়াজের দামে বাংলাদেশের বিশ্ব রেকর্ড

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

বৈশ্বিকভাবেই পেঁয়াজের বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বেড়েছে গড়ে সাড়ে ১১ শতাংশ। আর এক মাসে বেড়েছে সাড়ে ৫ ও এক সপ্তাহে আড়াই শতাংশের মতো। তবে বাংলাদেশে বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক বেশি হারে বাড়ছে পণ্যটির দাম। গত এক বছরে ৩৫২ ও এক মাসে ৬৪ শতাংশ বেড়ে দেশে পাইকারিতেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৭০ টাকায় (২ ডলার), যা বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ।

পেঁয়াজের বাজার নিয়ে হালনাগাদ তথ্য দিয়ে থাকে আন্তর্জাতিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস ট্রিজ। তাদের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল প্রতি কেজি পেঁয়াজের গড় পাইকারি মূল্য ছিল ৬৮ সেন্ট বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৫৮ টাকা। পেঁয়াজ উৎপাদন ও ব্যবহারকারী শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর বাজারের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভারতে গতকাল পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬২ সেন্ট, চীনে ২৮ সেন্ট, পাকিস্তানে ৩৯ সেন্ট, মেক্সিকোয় ১ ডলার ২১ সেন্ট ও তুরস্কে ১৪ সেন্টে। এর বাইরে ব্রাজিলে ৪০, মিসরে ১৭ ও স্পেনে ৩১ সেন্ট কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তবে ইন্দোনেশিয়ায় গতকাল পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এক পর্যায়ে ২ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর থেকেই বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। পাইকারিতেই ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে তা ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ২৫০ টাকা কেজি দরেও পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। আর কখনই দেশে এত বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন বাজার পর্যবেক্ষক ও ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের হামিদুল্লাহ মার্কেট কাঁচা পণ্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর পরই দেশের আমদানিকারকরা বিকল্প উৎস থেকে পণ্যটির আমদানি শুরু করেন। ওই সময় পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখতে পাইকারি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অনেক ব্যবসায়ীকে জেল-জরিমানা করা হয়। এসব ঘটনায় অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানি থেকে বিরত থাকেন। ফলে চাহিদার চেয়ে পণ্যটির আমদানি অনেক কম হয়েছে। সরবরাহ সংকট থাকায় দামও বেড়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর গত এক মাসে (১২ অক্টোবর-১৩ নভেম্বর) বিভিন্ন দেশ থেকে ৬৮ হাজার ৫৭২ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) নিয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে চীন থেকে আমদানির অনুমতি নেয়া হয়েছে ৫৮ হাজার ৮০৪ টন, পাকিস্তান থেকে ২ হাজার ২০০, তুরস্ক থেকে ৮২০ ও উজবেকিস্তান থেকে ২০০ টন। গত বুধবার পর্যন্ত এসব দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পেঁয়াজ খালাস হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৪২০ টন পেঁয়াজ। এছাড়া গত দেড় মাসে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৩৩ হাজার টন। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টন পেঁয়াজ টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ হিসাবে গত দেড় মাসে দুই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার টন।

যদিও দেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে দৈনিক ছয় হাজার টনের মতো। স্থানীয় পেঁয়াজ উঠতে আরো প্রায় ১৫ দিন বাকি থাকায় চাহিদার সিংহভাগই পূরণ হওয়ার কথা আমদানির মাধ্যমে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী আমদানি না হওয়ায় প্রতিদিনই বাড়ছে পণ্যটির দাম।

পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে গতকাল সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, কয়েকদিন আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল হয়েছে। এর কারণে দাম একটু বেড়েছে। একটু না আজ (গতকাল) পত্রিকায় দেখলাম ২০০ টাকা কেজি। এটা কোনোদিন আমরা ভাবিনি। আমি মনে করি, পেঁয়াজ আমদানিতে অন্তত কিছুদিনের জন্য শুল্ক শূন্য করে দেয়া উচিত।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দুদিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী বললেন, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আছে। একথা বলার পরদিনই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা হয়ে গেল। এখন ২০০ টাকা কেজি। বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ আছে, তার পরও দাম বাড়ছে। এখন একটি অভিযান চালানো দরকার। তাহলে এ সমস্যাটা আর থাকবে না।