স্বাস্থ্য সেবা ৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০৩:৪৭

শীতে ত্বকের যত্ন : ডা. নাদিয়া রুম্মান

লাইফস্টাইল ডেস্ক ঃ

শীতে আমাদের সবার ত্বক শুষ্ক হয় যার ফলে ত্বক চুলকোয় (itching), চামড়া উঠতে পারে (skin peeling), ত্বক ফাটতে (cracked skin) পারে। এ সব থেকে কালো দাগ হতে পারে এবং ইনফেকশনও হতে পারে।

তাই শীতকালে সুস্থ ত্বকের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। শীতে শুষ্ক ত্বক আরও শুষ্ক হতে পারে এবং তৈলাক্ত ত্বক শীতে শুষ্ক হতে পারে। আবার একই ত্বকে দু’ রকমের স্কিন টাইপ অর্থাৎ শুষ্ক এবং তৈলাক্ত, দুটোই হতে পারে। এটাকে আমরা ‘combination skin type’ বলে থাকি।

কম্বিনেশন ত্বকে T-zone অর্থাৎ কপাল এবং নাক তৈলাক্ত হয় কিন্তু মুখের বাকি অংশ শুষ্ক হয়। শীতকালে সাধারণত, শুষ্ক (Dry skin) ত্বক এবং ‘combination skin’ ত্বক বেশি দেখা যায় আমাদের দেশে।

নিম্ন লিখিত টিপস শীতকালের শুষ্ক ত্বকের জন্য:

১. দীর্ঘ সময় নিয়ে গরম পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না। শীতকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর ও ত্বক মুছবেন ও ধুবেন। ধোবার পর পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে হাল্কা করে মুছে নেবেন। তবে জোর দিয়ে ঘষা যাবে না।

২. শীতে ত্বক শুষ্ক থাকে, যার ফলে অতিরিক্ত সাবান অথবা কোনো অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত সাবান ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত সাবান ত্বককে আরও শুষ্ক করে ও ক্ষতি করে।

৩. গোসল যখন করবেন moisturizing body cleanser অথবা সাবান ‘PH balance Soap’ ব্যবহার করবেন।

৪. শীতকালে যে কোনো scrubbing/loofah ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। কারণ scrubbing/loofah ত্বককে (irritate) ক্ষতি করে।

৫. আমরা শীতকালে রোদ পোহাই। রোদে গেলে ২০ মিনিট আগে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা পর পর ‘broadspectrum sunblock’ ব্যবহার করবেন, যার ন্যূনতম SPF 30 হতে পারে। দিনে SPF containing moisturizer ব্যবহার করতে পারেন। এতে আমাদের ত্বক সুরক্ষিত থাকবে সূর্যের ক্ষতিকারক UVA/UVB রশ্মি থেকে, যা আমাদের ত্বককে কালো (pigmentation) করে এবং ত্বক আরও রুক্ষ ও লাবণ্যহীন দেখা যায়।

৬. যারা নিয়মিত সাঁতার কাটেন, যদি সুইমিং পুলে সাঁতার কাটেন আর আপনার ত্বক শুষ্ক বা সংবেদনশীল হয়ে থাকে, তাহলে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকবেন। কারণ শীতকালে chlorine পানি ত্বককে শুষ্ক করে।

৭. শীতে যারা Room Heater ব্যবহার করেন, এতে ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক হয়। ঘর গরম করে Room Heater বন্ধ রাখতে পারেন। বেশি করে পানি পান করবেন মিনিমাম ৮-১০ গ্লাস। কারণ Room Heater আমাদের ত্বক এবং শরীরকে Dehydrate করে। Room Heater ব্যবহার করার সময় ত্বককে ভালোমতো ঢেকে নিতে হবে, যদি ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক এবং সংবেদনশীল হয়। তাছাড়া ত্বককে ভালো রাখতে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

৮. যদি আপনার Eczema/Atopic dermatitis/Psoriasis চর্মরোগ থাকে তাহলে সুতি কাপড় পরবেন। উপরোক্ত চর্মরোগ ছাড়াও যদি আপনার ত্বক শুষ্ক হয়, Moisturize করার পরও ত্বক চুলকায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। Thyroid/kidney/liver নানা রোগের কারণেও ত্বক শুষ্ক হতে পারে এবং চুলকানোর সমস্যা হতে পারে।

৯. শীতকালে অনেক জরুরি হচ্ছে একটা Moisturizer ব্যবহার করা। Moisturizer-এর কোনো বিকল্প নেই শীতকালে। Moisturizer-এর কাজ হচ্ছে ত্বকের moisture-কে ধরে রাখা। শীতকালে আমাদের ত্বককে moisture/hydrate করতে হবে। বাজারে অনেক রকমের Moisturizer পাওয়া যায়, খেয়াল রাখতে হবে Moisturizer 'hypoallergenic' , 'fragrance free', 'paraben free' এবং 'preservative free' হতে হবে যাতে শুষ্ক ত্বকে কোনো Allergic Reaction না হয়। Moisturizer-এ সুবাস যত কম Moisturizer তত ভালো হবে। কারণ কম সুবাসের Moisturizer-এ কম chemicals থাকে, এতে ত্বক সুস্থ থাকবে।

১০. আপনার ত্বক অনুযায়ী Moisturizer ব্যবহার করবেন। সঠিক Moisturizer ব্যবহার না করলে তৈলাক্ত ত্বক আরও তৈলাক্ত হতে পারে এবং তৈলাক্ত হয়ে ব্রণ হতে পারে। শুষ্ক ত্বকে এর জন্য Moisturizer-এর উপাদান হবে cream form অথবা ointment form। কম্বিনেশন ত্বকে cream form এবং তৈলাক্ত ত্বকে হবে lotion form.

১১. কী Moisturizer ব্যবহার করবেন? অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক (Excessive dry skin)-এর জন্য Moisturizer-এর উপাদান হবে Urea/Petroleum jelly. শুষ্ক ত্বক (dry skin)-এর জন্য Moisturizer-এর উপাদান হবে Ceramides/aloe vera/Shea butter/coconut oil/jojoba oil. কম্বিনেশন ত্বক/ব্রণ প্রবণ ত্বকের জন্য Moisturizer-এর উপাদান হবে Glycerin/Hyaluronic acid cream.

১২. কখন Moisturizer লাগাবেন? গোসলের পর ৫-১০ মিনিটের মধ্যেই ত্বকে Moisturizer লাগাবেন। এতে ত্বক ভেজা থাকতেই ত্বকে Moisture লক করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘসময় ত্বক Moisturized থাকে। যখনোই ত্বক শুষ্ক মনে হবে বা টানবে, তখনোই লাগাবেন। তৈলাক্ত ত্বক হলে দিনে ২-৩ বার লাগাবেন (তৈলাক্ত ত্বকে অতিরিক্ত লাগালে ব্রণ হয়)। অতিরিক্ত শুষ্ক হলে খেয়াল রাখতে হবে, ত্বক সব সময় Moisturizer দিয়ে ভেজা থাকবে অর্থাৎ hydrated থাকবে।

১৩. মুখের ত্বকে Moisturizer cream ব্যবহার করতে পারেন, শরীরে ত্বকে তেল ব্যবহার করতে পারেন শীতকালে যেমন নারকেল তেল/অলিভ অয়েল। মুখে কখনোই সরিষার তেল লাগাবেন না, এতে কালো দাগ/মেছতা আরও বেড়ে যেতে পারে।

১৪. সংবেদনশীল ত্বকের জন্য শরীরে glycerin/coconut oil/olive oil লাগাতে পারেন। ১৫. কম খরচে সবচেয়ে ভালো Moisturizer শীতকালের শুষ্ক ত্বকের জন্য হচ্ছে Glycerin মুখের ত্বকের জন্য এবং শরীরের জন্য নারকেল তেল, অতিরিক্ত শুষ্ক হলে petroleum jelly.

১৬. প্রতিদিন এক চামচ মধু এবং হাফ চামচ ঘি (যদি খেতে বারণ না থাকে) শীতকালে ত্বকের জন্য ভালো। এতে ত্বক উজ্জ্বল হয়।

১৭. শীতকালে খাদ্যাভাসে যা খাবেন- লেবু, মালটা, কমলা, আম্লা পাকা পেঁপে, বেদানা ভিটামিন 'সি'-এর জন্য। ভিটামিন 'এ'-এর জন্য গাজর, সবুজ শাক-সবজি, মিষ্টি আলু ও দুধ। ভিটামিন 'ই'-এর জন্য পালং শাক, সব ধরনের বাদাম, সানফ্লাওয়ার অয়েল। ভিটামিন 'বি' ১২-এর জন্য ডিম, মাছ, ফ্যাট ফ্রি মাংস, টক দই, পনির, মাশরুম এবং fortified cereals খাবেন। এ সব খাবারে Vitamin, minerals, Antioxidants এবং Glutathione থাকে যা ত্বককে দাগমুক্ত রাখে, Collagen Production বাড়ায় যা ত্বকের moisture ধরে রাখতে সাহায্য করে।

১৮. শীতকালের শুষ্ক ত্বকের জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি হচ্ছে মধু। মধু লাগাতে পারেন নিয়মিত, এতে ত্বক মসৃণ ও নরম হয়।

১৯. নারীদের ক্ষেত্রে cosmetic products (প্রসাধনী সামগ্রী) হবে 'Alcohol Free' যেন ত্বক শুষ্ক না হয়।

২০. মুখ ধুবেন একটা Gentle mild cleanser অথবা Soap free cleanser দিয়ে। মুখে সাবান ব্যবহার করা যাবে না।

২১. যাদের Eczema, atopic dermatitis আছে, তারা Humidifier ব্যবহার করলে ভালো, ত্বক শুষ্ক হবে না।

২২. বয়সের সঙ্গে ত্বক অনেক শুষ্ক হয়, ত্বক পাতলা হয়। যার ফলে ত্বক দীর্ঘ সময়ের জন্য Moisture ধরে রাখতে পারে না। বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে Moisturizer বেশি পরিমাণ লাগানো প্রয়োজন এবং বার বার লাগাতে হবে ত্বককে ঠিকভাবে Hydrate করে রাখার জন্য।

লেখক: ডা. নাদিয়া রুম্মান, প্রধান নির্বাহী (সিইও), অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজি অ্যান্ড লেজার কনসালটেন্ট, ড. এন অ্যাসথেটিকস।

ফেসবুক পেজ- Dr. N Aesthetics ইউটিউব চ্যানেল- Dr. Nadia Rumman