আইন ও আদালত ৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০৫:৩৬

নারায়ণগঞ্জে এখনো এসপি হারুন, ব্যাবহার করছেন সরকারি গাড়ি

ডেস্ক রিপোর্ট ।।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদকে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও এখনও কাউকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি তিনি। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের জন্য বরাদ্দ করা সরকারি গাড়িটি এখনও তিনি ব্যবহার করছেন। জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া বুধবার (৬ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস সপ্তাহের অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা গেছে। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে স্বাগত জানাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সঙ্গে এগিয়ে যান এসপি হারুন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রূপগঞ্জে ফায়ার সার্ভিসের অনুষ্ঠানে বেলা ১১টার দিকে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এসময় তাকে রিসিভ করতে এগিয়ে যান নারায়ণগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ। তবে গাড়ি থেকে নেমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাস্যোজ্জ্বল মুখে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এসময় সাবেক এসপি হারুন অর রশিদকে ঘটনাস্থলে দেখে কিছুটা গম্ভীর মুখে মাথা নেড়ে তার সঙ্গে কিছু একটা বলতে দেখা যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুষ্ঠান মঞ্চের দিকে চলে যান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসপি হারুনকে উদ্দেশ করে কী বলেছেন, এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি সেখানে উপস্থিত কোনও কর্মকর্তাই। পরে মন্ত্রী অনুষ্ঠানের মঞ্চের দিকে চলে যান এবং তার পেছনে পেছনে কিছুদূর এগিয়ে যান এসপি হারুন। তবে অনুষ্ঠান শুরু হলে অনুষ্ঠানস্থলে বা এর আশেপাশে কোথাও তাকে দেখা যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার পদ থেকে মোহাম্মদ হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের টিআর শাখায় বদলির আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছেন। বুধবার রাতে এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের সরকারি নম্বরে কথা বলার জন্য একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলাম টেলিফোনে জানান, ‘এখন পর্যন্ত কাউকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। জেলা পুলিশ সুপারের জন্য নির্ধারিত মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন তিনি। এই নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।’

উল্লেখ্য, গত ১ নভেম্বর রাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ফারা রাসেল ও ছেলে আনাব আজিজকে বাসা থেকে তুলে আনার অভিযোগ ওঠে এসপি হারুন ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিমের বিরুদ্ধে। শওকত আজিজ রাসেলকে ফাঁসানোর জন্য গাড়িতে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে নাটক সাজিয়ে দুই নম্বর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন এসপি মো. হারুন অর রশিদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ১ নভেম্বর রাত পৌনে ১টায় নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড চৌরঙ্গী ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে শওকত আজিজ রাসেলের গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ চালক সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। 

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় গাড়িতে থাকা শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ফারা রাসেল ও ছেলে আনাব আজিজকে। পরে দুপুরের দিকে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাশেম ও বড় ছেলে আজিজ আল কায়সার টিটু এসপি অফিস থেকে ছেলের বউ ও নাতিকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। তবে শওকত আজিজ রাসেল ও ড্রাইভার সুমনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু বিপত্তি বাধে শওকত আজিজ রাসেলের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে। বিষয়টি খোলাসা হয় যে চৌরঙ্গী ফিলিং স্টেশন থেকে নয়, শওকত আজিজ রাসেলের বাসা থেকে স্ত্রী ও ছেলেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরই মধ্যে দুই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। তবে ছয় দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আছেন রাসেলের ড্রাইভার সুমন।

জামিন পেয়ে শওকত আজিজ রাসেল জানান, চার কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন এসপি হারুন। চাঁদা না দেওয়ায় নারায়ণগঞ্জে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। চাঁদা না দেওয়ার কারণেই ঢাকা ক্লাবের সামনে থেকে তার গাড়ি গায়েব করে দেয় পুলিশ। তার একদিন পর গায়েব হন তার স্ত্রী ও সন্তান। তাকে ফাঁসানোর জন্য গাড়িতে বিপুল পরিমাণ মাদক ও গুলি দেখে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। আর তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা।