অর্থ ও বাণিজ্য ৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০৬:৫৪

পেঁয়াজ কারসাজি: চার মাসে লুট ৩২শ কোটি টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট ।। 

চলতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবর এ চার মাসে পেঁয়াজের বাজারে কারসাজির মাধ্যমে ভোক্তাদের ৩ হাজার ১৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা লুটে নেওয়ার অভিযোগ করেছে কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) নামের একটি সংগঠন।

এ হিসাবে পেঁয়াজের মূল্য কারসাজিতে প্রতিদিন ভোক্তার ক্ষতি হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। 

গতকাল রবিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের মূল্য নৈরাজ্য’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে এ অভিযোগ করা হয়।

সংগঠনটি জানায়, দেশের ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজের বাজার নিয়ে অবশ্যই নৈরাজ্য হয়েছে। চার মাসে কারসাজির মাধ্যমে ভোক্তাদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট যে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তা দিয়ে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হতো বলেও দাবি করে সংগঠনটি।

গবেষণার তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১২২ দিনে পেঁয়াজের মূল্য ওঠানামা করেছে ২৪ বার। কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে জুলাইয়ে ৩৯৭ কোটি ৬৭ লাখ, আগস্টে ৪৯১ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার, সেপ্টেম্বরে ৮২৫ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার এবং অক্টোবরে ১ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ভোক্তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত মূল্য তালিকা এবং নিজস্ব উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পেঁয়াজের মূল্য ধরে হিসাব করা হয়েছে। গবেষণার জন্য ২ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পেঁয়াজের মূল্য বিবেচনায় নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজের যৌক্তিক মূল্য ৩০ টাকা এবং অক্টোবর মাসের জন্য যৌক্তিক মূল্য ৫০ টাকা ধরা হয়।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি খুচরা বাজারে পেঁয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকাও বিক্রি হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম। কোথাও কোথাও পেঁয়াজ এখন ‘হালি’ দরে বিক্রি হচ্ছে, যা আগে কখনই ঘটেনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি এখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।

মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের পক্ষে এখন পেঁয়াজ দুর্লভ পণ্যে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত দুই সপ্তাহে অকল্পনীয় হারে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। মূলত চার মাস আগে অর্থাৎ জুলাই থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো শুরু হয়। তখন সরবরাহ ও আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও একদিনেই কেজিপ্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করা হয়। সেই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে (১২২ দিন) মোট ২৪ বার পেঁয়াজের মূল্য ওঠানামা করেছে।

পেঁয়াজের মূল্যের এই ওঠানামার পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে উল্লেখ করে পলাশ মাহমুদ বলেন, গত চার মাসে বাণিজ্যমন্ত্রী অন্তত পাঁচবার স্বীকার করেছেন, পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে সিন্ডিকেট কাজ করছে। চট্টগ্রামে সিন্ডিকেটের ১৩ সদস্যকে চিহ্নিত করা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা ভোক্তাকে হতাশ, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করে।

মূল্য বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বারবার সরবরাহ সংকট ও আমদানি খরচের কথা বলা হলেও দুটি যুক্তিই শুধু অজুহাত ও ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার কৌশল বলে মন্তব্য করেন পলাশ মাহমুদ। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভারত পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও পরে রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানো হয়।

একদিনেই বর্ধিত দামের পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসা সম্ভব নয়। এর পরপরই ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু দেশের বাজারে সর্বত্রই এখনো ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এতেই প্রমাণিত হয় পেঁয়াজের সরবরাহ যথেষ্ট ছিল এবং আছে।

সিন্ডিকেটের হাতিয়ে নেওয়া এ অর্থ দিয়ে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, চার মাসে মূল্য বেড়েছে ৪০০ গুণ। আর গত এক মাসের হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন প্রায় ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

অতিমুনাফার লোভে অনৈতিকভাবে দাম বাড়িয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির অপরাধে রাজধানীর শ্যামবাজারের ছয় পাইকারি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং কমিটি অভিযান পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- নিউ স্বপ্ন বাণিজ্যালয়, আহসান ট্রেডার্স, রেদোয়ান বাণিজ্যালয়, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স, লালন সাহা ভা-ার এবং মায়ের দোয়া ভাণ্ডার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং কমিটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি মো. আব্দুর রবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় সার্বিক সহযোগিতা করেন সূত্রাপুর থানার পুলিশ সদস্যরা।