লাইফ স্টাইল ১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০৯:১৮

বাড়ির কাছেই জমিদারবাড়ি

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

বিরুলিয়া জমিদারবাড়ি। বাসে চড়ে সাভার থানা বা বাজার বাস স্ট্যান্ড। অটো বা রিকশায় চড়ে নামাবাজার ব্রিজ। ব্রিজের গোড়া হতে ভাড়ায় খাটা মোটরবাইক কিংবা টমটমে কাজিয়ালকুন্ড।

এ গ্রামের বুক চিরে সদ্য পিচ করা সড়ক, চলে গেছে একেবারে ঢুলি ভিটা পর্যন্ত। গরুর দুধের এক কাপ মালাই চা পান করে চলে যান, আড়ালিয়। খেয়ায় ধলেশ্বরী নদী পার হয়ে গ্রামের সবজি ক্ষেতের আল ধরে, সোঁদা মাটির গন্ধ শুকতে শুকতে, চলে যান বড়দাইল গ্রামে। দেখবেন কিভাবে পরিশ্রম করে গ্রামের বউ-জি’রা মুড়ি ভাজতেছে। এছাড়া গ্রামটাও খুব সুন্দর। যাকে বলে খাঁটি বাংলার রূপ।

এরপর ফোর্ডনগর ব্রিজ পার হয়ে চলে যাই পঞ্চবটি আশ্রম। সেখানে গ্রাম্য পদ্ধতিতে তৈরি মিঠাই, মুড়কি আর খই চিবিয়ে, অটো’য় করে চলে যান সিঅ্যান্ডবি সড়ক ধরে শ্যামপুর গোলাপ গ্রামে। হাজার হাজার গোলাপের মাঝে নিজেকে কিছুটা সময় বিলিয়ে দিয়ে বিরুলিয়া জমিদারবাড়ি।

জমিদার রজনীকান্ত ঘোষের বাড়ি বাইরে থেকে প্রথম দেখায় নিরাশ হবেন না। কিংবা কারও বারণ শুনে চলেও আসবেন না। চলে যাবেন বাড়ির ভেতরে। এবার দাঁড়ান কিছুক্ষণ উঠোনে।

আমরা স্থানীয় কিশোর মঞ্জুকে সঙ্গী করে প্রথমে অন্দরমহলে ঢুকি। একেবারে চিলেকোঠা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে দেখি। জমিদারবাড়িটিতে মোট ১১টি স্থাপনা রয়েছে। লোক মুখে জানতে পারি, বর্তমানে দুটো হিন্দু পরিবারের বসবাস রয়েছে। তারা নাকি জমিদারের বংশধর। আমরা যে স্থাপনাটিতে ঢুকেছি তা পুরোই ফাঁকা। ঘরের মেঝে, সিলিং, দরজা, জানালায় এখনও তৎকালিন আভিজাত্য দৃশ্যমান।

নেই শুধু পাইক-পেয়াদাদের হাঁকডাক। কিংবা বাইজির নূপুরের আওয়াজ। দেখতে দেখতে দোতলা পেরিয়ে ছাদ। এরপর চিলেকোঠায়। ছাদ থেকে পুরো বাড়ি ও তার আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখি। বাড়িটি এক সময়কার প্রমত্তা তুরাগ নদের তীরে। বর্ষায় যার রূপ-যৌবন অনেকটাই ফিরে আসে। আসে না শুধু জমিদার রজনীকান্তের শৌর্যবীর্য। এ বাড়ির পূর্ব মালিক ছিল জমিদার নলিনী মোহন সাহা।

তার কাছ থেকে ৮৯৬০ টাকা ৪ আনা দিয়ে জমিদার রজনীকান্ত ক্রয় করেছিলেন। বাড়িটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটা মন্দির, সদর ঘর, বিচার ঘর, সাজঘর, বিশ্রামাগার, পেয়াদা ঘর, ঘোড়াশালসহ আরও কিছু ঘর। ১৯৬৪ সালের দাঙ্গার সময় রজনীকান্ত ঘোষের স্মৃতিসহ মূল্যবান অনেক কিছুই লুট হয়ে যায়। ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোতে ঘুরতে গেলে, মনের ভেতর একপ্রকার নস্টালজিয়া কাজ করে।

পুরো বাড়িটি ঘুরে, এবার গিয়ে উঠলাম কোষা নৌকায়। তুরাগের পানিতে প্লাবিত বিলে নৌকা ভাসে। চারপাশের অনেক গ্রাম মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। যা আপনাকে হাওর ভ্রমণের আনন্দ অনেকটা বিরুলিয়াতেই দেবে। ভাসতে ভাসতে বিচ্ছিন্ন এক বটবৃক্ষের ছায়ায় নৌকা ভিড়াই। সেখান থেকে বিরুলিয়ার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা লিখে বুঝান সম্ভব না। শুধু এতটুকুনই লিখব, ঢাকার আশপাশ থেকেও যারা এখনও এই শরতে বিরুলিয়া দেখেন নাই, তারা যেন সুখময় কিছুটা সময়ের সন্ধানে ঘুরে আসতে পারেন সুন্দর এ এলাকাটা।

কীভাবে যাবেন : মোটরবাইক/সাইকেলে বেস্ট। গুলিস্তান/গাবতলীসহ ঢাকার অনেক বাস স্টপেজ থেকেই সাভার যাওয়া যাবে।