আন্তর্জাতিক ১৬ মে, ২০২৪ ১০:২৯

ক্রমেই কি ফিকে হচ্ছে মোদির জয়ের সম্ভাবনা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতে এবার সংসদ নির্বাচন শুরুর আগে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্লোগান দিয়েছিলেন ‘আব কি বার চারশ পার’, অর্থাৎ বিজেপি জোট এবার ৪০০ আসন অতিক্রম করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।

তবে সাত দফার নির্বাচনে চার ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন দলটির নেতারাও ওই স্লোগান ভুলেও মুখে আনছেন না। অন্যদিকে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছে, ‘দেখবেন, বিজেপির আসন সংখ্যা দুইশর নিচে নেমে আসবে।’

বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের প্রায় সব রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা মোটামুটি একমত, মোদির নেতৃত্বে বিজেপি জোট এখনও অবশ্যই এগিয়ে। কিন্তু ৪০০ আসন তো দূরস্থান, গত নির্বাচনে এককভাবে বিজেপি যে ৩০৩টি আসনে জিতেছিল, সেই পুরোনো রেকর্ড ধরে রাখাও তাদের পক্ষে খুবই কঠিন। এমনকি পার্লামেন্টে সাধারণ গরিষ্ঠতা পেতেও হয়তো তাদের বেগ পেতে হবে।

ভারতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় মোট ৫৪৩টি আসন। ফলে সাধারণ গরিষ্ঠতা পেতে হলে কোনো দল বা জোটের অন্তত ২৭২টি আসনে জিততে হয়। মোদির গত ১০ বছরের শাসনকাল ভারতে ‘মোদি ডিকেড’ বলে ডাকা হচ্ছে। তার পরও এবারের নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে এমন চ্যালেঞ্জ আসতে পারে– মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও বিজেপি নেতারা তা ভাবতেও পারেননি। চার দফায় দেশের ৭০ শতাংশেরও বেশি আসনে ভোট হয়ে যাওয়ার পর বিজেপি নেতাদের গলায় সেই আত্মবিশ্বাসী সুর আর শোনা যাচ্ছে না। অন্যদিকে রাহুল গান্ধী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরোধী নেতা-নেত্রীরা রোজই তাদের আক্রমণের সুর চড়াচ্ছেন। বলছেন, বিজেপি ২শর নিচে নেমে যাবে। 

যোগেন্দ্র যাদব ও প্রশান্ত ভূষণের মতো নিরপেক্ষ নির্বাচনী কৌশল প্রণেতারাও পূর্বাভাস করছেন, নির্বাচনী গতি-প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, বিজেপি জোটের পক্ষে সাধারণ গরিষ্ঠতা অর্জন করাই খুব মুশকিল। ভিন্নমতও অবশ্যই আছে। 

এরই মধ্যে গত সপ্তাহে ভারতের শেয়ারবাজারে যে আকস্মিক পতন লক্ষ্য করা গেছে, তাকেও অনেকে এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রতিফলন বলেই ব্যাখ্যা করছেন। কারণ, শেয়ারবাজার সবচেয়ে ভয় পায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে। 

এই নির্বাচনে অবাক করার মতো ফল হতে পারে– এ কথাটা রাজনৈতিক পণ্ডিত থেকে সাধারণ ভোটাররা অনেকেই এখন প্রবলভাবে বিশ্বাস করছেন।

ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক সৌমিত্র দস্তিদার এক নিবন্ধে লিখেছেন,  সবাই বলতে শুরু করে দিয়েছেন,  মোদির ৪০০ আসন জেতার স্বপ্ন এবারের নির্বাচনে অলীক হয়েই থেকে যাবে। কেউ কেউ এমনও ভাবছেন, ২০০৪ সালের ভোটে অটল বিহারি বাজপেয়ি সরকার যেভাবে অপ্রত্যাশিত খারাপ ফল করেছিল, মোদির সরকারের হাল ঠিক তেমনই হবে এবার। তবে বিজেপির অনুগত হিসেবে পরিচিত নির্বাচন কমিশন তলে তলে অন্য কিছু করে কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সৌমিত্র দস্তিদার। 

সিপিআই এমের পলিটব্যুরো সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ দলের সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মোদি চারশ চারশ করে চেঁচিয়ে বাজার গরম করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা যে তা নয়, বুঝতে পেরে এখন বড় বড় কথা বলা নিজেই বন্ধ করে দিয়েছেন। মোদির বক্তৃতায় কোথাও কোনো গঠনমূলক আলোচনা নেই। বক্তৃতায় শুধুই কংগ্রেস, রাহুল গান্ধী ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলের প্রতি বিষোদ্গার করা আর নিয়ম করে প্রতিটি জনসভায় নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়কে  (মুসলিমদের) গালমন্দ করে যাওয়া মোদির দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে; যা কস্মিনকালেও এ দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের মুখে শোনা যায়নি। এমন খোলাখুলিভাবে সাম্প্রদায়িক তাস খেলা কখনও এ দেশের নির্বাচনে আগে কেউ কল্পনাও করেনি। 

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মোদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গল্প এবং ভারতের উত্থানের কথা বলেন। কিন্তু জনগণ বাস্তবে সেই সাফল্যের গল্প অনুভব করছে না। কিছু ক্ষেত্রে তা সরকারের প্রতি ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

সৌমিত্র দস্তিদার লিখেছেন, মোদির অনুগত মিডিয়া ভারতের ঝলমলে আলোটুকুই দেখায়। সে আলোয় এলিটদের চোখে মোদিজিকে বড় উজ্জ্বল লাগে। শহরের এই এলিট, মিডিল ক্লাস দেশের জনসংখ্যার নিরিখে সামান্য। গ্রামীণ ভারতে যে মোদিবিরোধী হাওয়া উঠছে, তা রাহুল গান্ধীর দু’দফার পদযাত্রার সময়েই গ্রামে-মফস্বলে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ দেখেই টের পাওয়া গিয়েছিল। 

আমাদের কাগজ / টি আর