নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন সময় এডহকে নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তিদের স্থায়ীকরণ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার এবং আজ (শনিবার) দু’দফা হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম না মেনে গত তিন বছরে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিভিন্ন পদে প্রায় দুই হাজার জনকে এডহকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পাওয়া এসব ব্যক্তিদের চাকরি স্থায়ীকরণ করতে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আবার নিয়ম ভাঙছেন বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতাদের একাংশের।
তাদের দাবি, বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে ২৮ মার্চ। ইতোমধ্যে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ীকরণ কমিটির মতামত না নিয়ে তড়িঘড়ি করে স্থায়ীকরণের জন্য ভাইভা নিচ্ছেন বর্তমান উপাচার্য, যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
বিএসএমএমইউয়ের একাধিক সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বাচিপ নেতাদের একাংশ মিছিল করে উপাচার্যের কার্যালয়ের অভিমুখে ঘেরাও করে। এ সময় উপাচার্যের অনুগতদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি এক বছর পর নিয়মিত হবে এবং বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও স্থায়ীকরণ কমিটির মতামতের ভিত্তিতে স্থায়ী হতে পারবেন। স্থায়ীকরণ কমিটিতে থাকতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি, ট্রেজারার, বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন বিভাগের ডিন ও হাসপাতাল পরিচালককে।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন সুমন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী স্থায়ীকরণ হবে ভাইভা বোর্ডের প্রতিটি সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে। কিন্তু সেটি মানছেন না বর্তমান উপাচার্য। তড়িঘড়ি করে নিজ অনুগতদের পদোন্নতি ও এডহকে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের স্থায়ী করছিলেন। এতে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালাতে গেলে প্রোভিসি, ট্রেজারার, ডিন এসব পদ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হয়। সেটা তিনি করেননি। পছন্দ মতো নিয়োগ দিয়ে এখন এদের স্থায়ী করার চেষ্টা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক চিকিৎসক-কর্মকর্তা বলেন, অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ নিয়ম-নীতিকে পাত্তা না দিয়েই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভাইভা নিচ্ছিলেন। যদিও চলতি মাসের শুরুতেই সিন্ডিকেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় নতুন উপাচার্য দায়িত্ব পাওয়ার আগে কোনো পদোন্নতি বা স্থায়ীকরণ যেন না করা হয়।
নিয়োগ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউয়ের ডিন (ডেন্টাল অনুষদ) ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ হয় ছয় মাসের জন্য। এরপর বাড়লে সেটা আবার ছয় মাসের জন্য বাড়ে। এভাবে এক বছর হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়মিত হয়। নিয়মিত হওয়ার পর চাকরি স্থায়ী করতে হয় মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কমিটির মাধ্যমে। মূলত এ বিষয় নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। গতকাল একটি মিটিং ছিল, সেটি হয়নি।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে যতটুকু জানি স্বাচিপের চিকিৎসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা মিছিল বের করেন। উনাদের দাবি, যেহেতু ইতিমধ্যে নতুন উপাচার্য নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন সুতরাং কোনো পদোন্নতি দেওয়া, স্থায়ীকরণ, সিন্ডিকেট মিটিং করতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে বর্তমান উপাচার্য নিজেও আশ্বস্ত করেছেন।
এ ঘটনায় বর্তমান উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের একটি মিটিং করছিলাম। সেখানে কিছু পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশের কথা ছিল। এর মধ্যে কিছু চিকিৎসক এসে বলল এই মিটিং করার দরকার নেই। এর মধ্যেই বাইরে শুনি কিছু মানুষ হইহুল্লোড় করছে। তারা চাচ্ছে যেহেতু আমার শেষ সময়, আমি যেন কোনো কিছু না করি। আমিও আমার শেষ সময়ে কোনো ধরনের ঝামেলায় জড়াতে চাই না, তাই আমি মিটিংটি স্থগিত করেছি।
চাকরি স্থায়ীকরণের লক্ষ্যে গোপনে কোনো ভাইভা নেওয়া হচ্ছিলো কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ধরনের ভাইভা নেওয়া হচ্ছিল না। তবে একটা পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, ফলাফল আজ প্রকাশের কথা ছিল। যেহেতু এটা নিয়ে একটি পক্ষ আন্দোলন করছে এবং আমার সব কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে, তাই আমিও সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছি।