গণমাধ্যমে দৈন্যতার যুগ চলছে যেন। সাংবাদিকতা এখন যেন চর্চার বিষয় নয়, সাংবাদিকতাকে পূজি করে কিছু ব্যাক্তি চাটুকারিতায় মেতে উঠে। এরা যেমন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বুঝে না, ঠিক তেমনি চলমান পরিস্থিতির উপর নজর রাখার দায় এদের নেই। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদেশ সফর, প্লট ও ফ্ল্যাটের বরাদ্দ এসব নিয়েই কথিত এই সাংবাদিকগুলোর চিন্তার বিষয়বস্তু। গণমাধ্যমের এ ক্রান্তিকালে এ বিষয় নিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস শেয়ার দিয়েছেন সাংবাদিক, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান। আমাদের কাগজ পাঠকদের জন্য সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
"সুপ্রভাত প্রিয় স্বজনেরা
কয়েকদিন আগে একজন সহকর্মী জানতে চাইলেন শরীরের খবর কি?বললাম রাত ঘুমহীন কাটে, প্রেসার বেড়েছে,ডাক্তার ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে দিয়েছেন।তিনি জানতে চাইলেন কেনো এমন?সহজ সরল মনে বললাম,সমাজ ও রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহ শরীর ও মনে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।তাই এমন অবস্হা।তিনি বললেন,আরে রাখো এটা,আসল ঘটনা বলো।ভাবলাম বয়সে বড় না হলে একটা বেয়াদবি করতাম।
যে কোন ঘটনাইযে অনুভূতিপ্রবন মানুষের রক্তে মনে প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে এটা তিনি বুঝবেন কি করে!
আজীবন দলবাজি চামচাবাজি করে কেরানি সাংবাদিকতা করেছেন।নেতানেত্রীদের ভাষন লেখা আর প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে রিপোর্ট বানানো ছাড়া জীবনে দু লাইন লেখার যোগ্যতা নেই।আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে ১০কাঠার প্লট পান,দেশে দেশে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সফর পান,নিজের অঢেল সম্পদতো যক্ষের ধনের মতোন রাখেনই।আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় সুবিধা নিলেও তাদের প্রয়োজনে কোন ভূমিকা নেই।আওয়ামীলীগের হাইকমান্ড বা সরকারের নীতিনির্ধারকরাও খোঁজ নেননা,আমলে রাখেননা,জানেনওনা,চিনেনওনা।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও ফিসফাস যোগাযোগ রাখেন,তারাও গোনায় ধরেননা।বলেন ছাত্রলীগ করতেন,কবে কখন কোথায়?কে তখন কোথায় সভাপতি সাধারন সম্পাদক সেটিও বলতে পারেননা।
আকামের ঢেকি না দল না প্রতিষ্টান না দেশ ও মানুষের প্রতি আবেগ অনুভূতি দায়বদ্ধতা আছে,না কখনো বিশেষ বা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট করার ক্ষমতা ছিলো,না এখনো একটা রিপোর্টের আইডিয়া দেবার ক্ষমতা আছে বা দুলাইন যে কোন বিষয় নিয়ে লেখার ক্ষমতা আছে!শিকারির মতোন এসব কেরানি সাংবাদিক সব সময় একটা চাকরি বাগিয়ে নেয়া,আর প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোকদের থেকে প্লট বিদেশ সফর আদায় করার চোরাগোপ্তা লাইনটি ঠিক জানে।
এসব বর্নচোরা সুবিধাবাদী বিড়ালদের জন্য এই দেশ ভালো থাকার এক নিরাপদ ভূমি।কিন্তু যারা লেখালেখি,সাংবাদিকতা রিপোর্ট খবরাখবর নিয়মিত রাখবে ও করবে,সমাজ রাজনীতি প্রশাসন চলমান ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষন করবে,পরিস্হিতি গভীর পর্যবেক্ষন করবে,তাদের ওষুধ খেয়েও ঘুম হবেনা।এবং বিদ্যমান পরিস্হিতি তাদের মনোজগতে প্রভাব সৃষ্টিই করবেনা,তীব্র প্রতিক্রিয়ায় যন্ত্রনাবিদ্ধ অস্হির রাখবে।কেউ চাইবে এরা তাদের পক্ষে লিখবে,কেউ চাইবে নির্মোহ সত্য আসুক নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে।
আমি বলি নিরপেক্ষ নয় সত্যি,যা যে কারও পক্ষেই যেতে পারবে।
দেশে সুবিধাবাদী সুযোগ সন্ধানী দলকানা অযোগ্য সাংবাদিকরাই পেশার প্রতি মানুষের মর্যাদা নষ্ট করেছে।এসব মেরুদন্ডহীন সাংবাদিকরা কোথাও চাকরি বাকরি না পেয়ে এই পেশায় এসে যোগ্যতা প্রমানে ব্যর্থ হলেও দলবাজি সুবিধাবাদিতায় চাকরিটা করে গেছে।এদের পাঠক চিনেনা।চিনে ক্ষমতার পাপোষ বা কেরানিগন।কেরানি কেরানি মাসতুতো ভাই।দুই দলে বিভক্ত গনমাধ্যমে এসব অযোগ্যদের নিরাপদ আশ্রয় আছে।
সাংবাদিকদের অনেক ফোরাম,সংগঠন আছে।আছে দলিল লেখক সমিতি।আমার খুব সখ অনুভূতিহীন নিউজসেন্সহীন ব্যর্থ রিপোর্টার থেকে গনমাধ্যমে চাকরি করে জীবন কাটিয়ে দেয়া মেধাহীন,যাদের সৃজনশীলতা সেন্স নেই,আছে নেতা নেত্রীদের ভাষন লেখার যোগ্যতা,তাদের নিয়ে একটি ভাষন লেখক সমিতি হোক।এরা এতোটাই অনুভূতিহীন রাষ্ট্র রাজনীতি ও সমাজের বাসিন্দা যে, কোন ঘটনা স্রোত বা গতিপ্রকৃতি তাদের মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে কি,তার এটা টেরও পায়না।দাসদের মতোন চাকরিটা করে যায়।দাসের চাকরিজীবিরা আর সংগঠনে নেতৃত্বের লোভে লালায়িত চাঁদাবাজ,আর লোভী অসৎ গনমাধ্যমের একাংশ পেশার বারোটা বাজিয়েছে।আরেকদল ছ্যাচড়া আছে, সন্ধ্যা নামলে ক্লাবে ক্লাবে মক্কেল খুঁজে বেড়ানো লকলকে জিহবার মানসিক দরিদ্র গনমাধ্যম কর্মি।আর একদল আছে যখন যারা ক্ষমতায় তাদের কাছ থেকে মোটাদাগের সুবিধা নিয়ে দলীয় নেতাদের চেয়েও বড় দলবাজ হওয়া।
পাঠক দর্শক এদের হিসেবে না নিয়ে প্রত্যাশার দৃষ্টি বাড়াতেই থাকে পেশাদার কলামিস্ট,টকশোতে কথা বলা গনমাধ্যম কর্মি ও অ্যাকটিভ রিপোর্টারদের।
আসলে সমাজটা চোখের সামনে ধীরে ধীরে নষ্ট হলো।একদল নারীপুরুষ দলবদল করলো,একদল সস্তা হতে হতে লোভ লাভের হিসেবে যেনো রাস্তায় গড়াগড়ি,এর ওর দুয়ারে ঘুরে ঘুরে কত ধরনের রঙঢং করে,দালালি চামচামি,সস্তামি করে দলবাজির মুখোশে সুবিধা আদায়ে ডুবলো।মূল্যবোধ ও নীতিহীনতার অবক্ষয়ে দেশজুড়ে সব পথে সব পেশায় সবখানে রুচিহীন মর্যাদাহীনদের নগ্ন উল্লাস বইছে।
বেহায়া আর বেহায়া আজ চারদিকে।দাসদাসীদের রমরমা বানিজ্যের হাটে নিরবে মূর্খরাও ভালো আছে।একদল সুবিধাবাদী আছে,সহজ সরল মনে তাকে তার কঠিন বিপদ থেকে মনপ্রান উজার করে উদ্ধার করে দিলে সে অকৃতজ্ঞ চিত্তে তার কাছ থেকে এক কাপ চা না খেলেও মনে করবে,এটা তার প্রাপ্য ছিলো।কাজটা এমনি এমনি হতো বা সে ১০বছরে না পারলেও দুদিনেই পারতো।এবং তার চোখের পর্দাটাও রাখবেনা,এতটাই বেচশম।যাক,এসব ধরে লাভ নেই।
আমার সীমাবদ্ধতা যতোটাই থাক,অহংকার এটুকু আছে,কোন সরকার থেকে প্লট,বিদেশ সফর নেইনি,আর মর্যাদার প্রশ্নে মাথাটা কোথাও নত করিনি।আমার মন,আমার পর্যবেক্ষন আমার বিশ্বাস যা বলে,তাই লিখি,তাই বলি।আমার দেশ,আমাদের মানুষের প্রতি আমার আবেগ আছে।"