কৃষি ৩১ আগস্ট, ২০২৩ ০৫:৫৪

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ‘পার্টনার প্রকল্প’

অযোগ্য ব্যক্তিকে কার স্বার্থে!

ছবিঃ ইন্টারনেট

ছবিঃ ইন্টারনেট

আমাদের কাগজ ডেস্কঃ ডিপিপির শর্ত না মেনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্ববৃহত প্রকল্প ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন, নিউট্রিশন, এন্ট্রিপ্রিনিউরশিপ এন্ড রেজিলিয়েন্স (পার্টনার) প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিযোগ পেয়েছেন ড.মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ফারুক। আর এই প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে, ৭৬০ কোটি টাকা। 

দেশে চলমান অর্থনীতিক সংকটের মধ্যেও ৭৬০ কোটি টাকার প্রকল্পে কী ভাবে একজন "অযোগ্য" লোককের প্রকল্প পরিচালক করা হলো সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে উত্তর দিতে পারছেন না কেউ। 

ডিপিপি শর্ত মতে, প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন, নিউট্রিশন, এন্ট্রিপ্রিনিউরশিপ এন্ড রেজিলিয়েন্স (পার্টনার) প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগের জন্য বিসিএস- কৃষি বিপণন ক্যাডারের কর্মকর্তা হতে হবে। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প পরিচালনার অভিজ্ঞতা অথবা বৈদেশিক মাস্টার্স/পিএইচডি থাকতে হবে। 

এ ছাড়া এতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকুরী ৭ বছর অবশিষ্ট থাকতে হবে। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট বা প্রকিউরমেন্ট সংক্রান্ত উন্নত প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। প্রকল্প প্রস্তুতকরণ টীমের সদস্য হতে হবে।

জানা যায়, উপর্যুক্ত যোগ্যতার মিল সাপেক্ষে বেতন গ্রেড ৫/৬। তবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক ড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-ফারুক বিসিএস মৎস্য ক্যাডারের কর্মকর্তা। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও প্রকিউরমেন্ট সংক্রান্ত কোন উন্নত প্রশিক্ষণ নেই। প্রকল্প প্রস্তুতকরণের কোন ধাপে তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। তবে সরকারী চাকরি ও বেতন গ্রেড সন্তোষজনক বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। 

এবিষয়ে জানতে চেয়ে ড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-ফারুককে ফোন দিলে তিনি মিটিংয়ের আছেন বলেন। পরে কখন ফোন দিতে পারি জানতে চাইলে তিনি সারাদিনই মিটিংয়ে থাকবেন বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে প্রকল্প পরিচালককে ফোন ও ম্যাসেজ দিলেও তিনি কোনো প্রতি উত্তর করেননি। 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, এখানে অনিয়ম হয়নি। যোগ্য ব্যাক্তিকেই প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছে। এতো বড় প্রকল্প আমরা অযোগ্য ব্যাক্তির হাতে দিতে পারি না। যারা প্রকল্প পরিচালক হতে পারেননি তারা হয়তো ভুল তথ্য দিচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, মন্ত্রী মহোদয় সবাইকে চিনেন। মন্ত্রী মহোদয় যোগ্য ব্যাক্তিকেই দিয়েছেন। ডিপিপির তাদের মনের মতো করে তৈরী করা হয়েছিল। তিনি তো কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের জোড়াদারকরণ প্রকল্পে আছেন। মন্ত্রী মহোদয় যোগ্য ব্যাক্তির নাম চেয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম বলেন, ‘পার্টনার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মন্ত্রণালয় যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই নিয়োগ দিয়েছেন।’

মন্ত্রণালয় সুত্র মতে, ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন, নিউট্রিশন, এন্ট্রিপ্রিনিউরশিপ এন্ড রেজিলিয়েন্স (পার্টনার) প্রকল্পের মোট বাজেট প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৭টি সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। যার মধ্যে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর অন্যতম। সেই অধিদপ্তরের আওতায় থাকছে ৭৬০ কোটি টাকা। 

সূত্রে আরো জানা যায়, গত ৩০ মে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন, নিউট্রিশন, এন্ট্রিপ্রিনিউরশিপ এন্ড রেজিলিয়েন্স (পার্টনার) প্রকল্পের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর অঙ্গের এজেন্সি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর (প্রকল্প পরিচালক) পদের নিয়োগ জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। সেখানে তিন জনের নামে প্রস্তাব করা হয়। 

তারা হলেন- স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (বিপণন অংগ) প্রকল্পের কম্পোনেন্ট পরিচালক (উপসচিব) ড. মোহাম্মদ রাজু আহমেদ, উপপরিচালক মোহাম্মদ রেজা আহম্মেদ খান ও উপ পরিচালক (উপসচিব) মোহাম্মদ এমদাদুল হক। ডিপিপির সঙ্গে যোগ্যতার মিল না হওয়া মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবিত তালিকা সংশোধিত করে আবার পাঠানোর জন্য অধিদপ্তরকে নিদের্শ দেওয়া হয়। 

সেই নিদের্শনা অনুযায়ী গত ১৭ জুলাই সংশোধন করে আবার নামের তালিকা পাঠায়। সেখানেও স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (বিপণন অংগ) প্রকল্পের কম্পোনেন্ট পরিচালক (উপসচিব) ড. মোহাম্মদ রাজু আহমেদকে বাদ দিয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল ফারুকের নাম দেওয়া হয়। 

এছাড়া প্রথম চিঠির প্রস্তাবিত উপপরিচালক মোহাম্মদ রেজা আহম্মেদ খান ও উপ পরিচালক (উপসচিব) মোহাম্মদ এমদাদুল হক সংশোধিত চিঠিতেও রাখা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে নতুন নাম পাঠানোর কথা বললেও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একজনের নাম যুক্ত করে পুরাতন দুইজনের নামও পাঠিয়েছিলেন। ডিপিপির যোগ্যতাকে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রাধান্য হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
 

আমাদেরকাগজ/ এমটি