আইন ও আদালত ১ আগস্ট, ২০১৯ ০৭:৫৭

মশা নিধনে গড়িমসি, স্থানীয় সরকার সচিবকে হাইকোর্টে তলব

এডিস মশা নিধনে বিদেশ থেকে নতুন ওষুধ আনার বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত না নেয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আজ (বৃহস্পতিবার) ২টার মধ্যে হাইকোর্ট এসে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এদিন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়রা ফাইরোজ।

শুনানিতে বিশেষ বিমানে করে মশা নিধনের নতুন ওষুধের নমুনা আজকের মধ্যে দেশে আসবে বলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবীরা আদালতকে জানান। একই সঙ্গে ওই নমুনা ওষুধের কার্যকারিতার বিষয়ে মহাখালীর একটি ল্যাবরেটরিতে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা চালানো হবে বলেও তারা আদালতকে অবহিত করেন।

শুনানির একপর্যায়ে ডেঙ্গু মশা নিধনে বিদেশ থেকে কার্যকরী ওষুধ আনতে গড়িমসি করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তলব করেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ২৫ জুলাই ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে দিয়ে এডিস মশা নির্মূল ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে ওই সময়ের মধ্যে ওষুধ ব্যবহার করে মশা নিধন হয়েছে কিনা, সে বিষয়েও প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন আদালত।

কিন্তু মশা নিধনে কার্যকরী ফল না পাওয়ায় ৩০ জুলাই এডিস মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ কবে দেশে আসবে, তা সরকার এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় ওষুধের বিষয়ে দুই সিটির আইনজীবীরা হাইকোর্টকে বিষয়টি অবহিত করেন।

২৫ জুলাই সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবীরা হাইকোর্টকে জানিয়েছিলেন, ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে দিয়ে এডিস মশা নির্মূল করতে চায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।

কারণ এখন যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তাতে মশা নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। কিন্তু মশা মরছে না। ফলে ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে দিয়ে মশা নির্মূল করা হবে।

তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন দিন সময় দেন আদালত। সে অনুসারে গত মঙ্গলবার প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুই সিটির আইনজীবীরা।

সেদিন আদালত বলেন, আপনার রাইফেল আছে, গুলি নেই। তখন রাইফেল থেকে কী লাভ? আইনজীবী বলেন, চীন থেকে ওষুধ আনা হবে। সিটি কর্পোরেশন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে মশা নিধনে।

আদালত বলেন, আপনাদের এ কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আইনজীবী বলেন, সারা বছরই মশা নিধন কার্যক্রম চলে। এখন মশার প্রকোপ বেড়েছে।

আদালত বলেন, যদি সারা বছর কার্যক্রম চলে তাহলে প্রকোপ বাড়বে কেন? আইনজীবী বলেন, নতুন একটি ওষুধ আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ হয়তো লাইসেন্সটা পেয়ে যাবে।

১-২ সপ্তাহের মধ্যে হয়তো ওষুধ চলে আসবে। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বিষয়টি মনিটর করা হচ্ছে। আদালত বলেন, ভারতেও ওষুধ রয়েছে। সেখান থেকে দ্রুত ওষুধ আনা যেতে পারে।

এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মাইনুল হাসানকে আদালত বলেন, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর বিস্তার লাভ করেছে। এ ব্যাপারে সরকার কি করছে?

আমরা কি প্রতিটি দফতরের লোকদের ডেকে তাদের বক্তব্য শুনব? মাইনুল হাসান বলেন, ডেঙ্গু বর্তমানে যে আকার ধারণ করেছে তাতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিয়ন্ত্রণে রাখতে।

এ প্রচেষ্টা গ্রহণ করা না হলে আরও বড় আকার ধারণ করত। তবে পুরনো ওষুধ যথেষ্ট কার্যকর হচ্ছে না। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। আদালত বলেন, অর্থমন্ত্রী বলছে ঢাকার মশা মারবে সিটি কর্পোরেশন।

তাহলে দেশের মশা কে মারবে? আমরা নতুন ওষুধ কেনা নিয়ে কোনো দফতর বা বিভাগের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি দেখতে চাই না।

প্রসঙ্গত, ডেঙ্গু ও এডিস মশা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন নজরে আসার পর ১৪ জুলাই হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।

আদেশে ঢাকা মহানগরীতে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহি অন্যসব রোগের বিস্তার রোধে এডিসসহ মশা নির্মূলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়