জাতীয় ২২ মে, ২০২৩ ০৬:১৫

উত্তাপ হারাচ্ছে সিলেট সিটি নির্বাচন

আমাদের কাগজ রিপোর্ট: ২০ মে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ করে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন গত দুই মেয়াদের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান তিনি। অন্য প্রার্থী ও ভোটারদেরও নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানান আরিফুল হক।

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সড়ে দাড়িয়েছেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা। আরিফের এই ঘোষণায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের উত্তাপ হারাতে চলেছে সিলেট। আরিফের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনের জৌলুস অনেকখানিই কমে যাবে বলে মনে করছেন অন্য প্রার্থী ও ভোটাররা।

নির্বাচন থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিলেও আরিফুল হককে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অনুরাধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল।

আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০ মে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ করে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন গত দুই মেয়াদের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান তিনি। অন্য প্রার্থী ও ভোটারদেরও নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানান আরিফুল হক।

তবে বর্তমান মেয়রের এমন বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সিলেটে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি সোমবার বলেন, ‘আরিফুল হক আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকাকালেই দুবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

‘গত ১০ বছর তিনি মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। কখনো কোনো অভিযোগ করেননি। বরং ২০ মে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া সমাবেশে বক্তৃতাকালেও তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের প্রশংসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীসহ সিলেটের অন্য মন্ত্রীরা তাকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন আরিফ। তারপরও কেন তিনি এবার নির্বাচন বর্জন করলেন, তার দুঃখটা কি- তা আমি ঠিক জানি না।’

আরিফ প্রার্থী না হওয়ায় এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা অনেকটাই কমে যাবে বলে ভোটারদের বিশ্বাস।

এ ব্যাপারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আরিফুল হক শেষ মুহূর্তে ভোটের মাঠ থেকে সরে যাবেন, এটি আমাদের প্রত্যাশা ছিল না। আমি এখনও চাই আরিফুল হক ও তার দল মত পাল্টাবেন এবং ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে আসবেন। কারণ ভোট ছাড়া তো জয়ের কোনো উপায় নেই।

‘আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে আসলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। তিনি বিগত ১০ বছর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে অনেক ভালো কাজ করেছেন। সিলেটের মানুষ ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করুক এটাই আমি চাই।’

তিনি বলেন, ‘সিলেটে নির্বাচনের পরিবেশ নাই- ওনার এই বক্তব্য আসলে ঠিক না। তার এমন অভিযোগ সিলেটের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির সঙ্গে মাননসই নয়।’

আরিফুল হক প্রার্থী না হলে নির্বাচন কিছুটা জৌলুস হারাবে বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি বলেন, ‘আরিফুল হকের নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তে নগরবাসী নৌকা, ধানের শীষ ও লাঙলের ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হল।’

তবে আরিফ না আসায় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জয়ের সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেল বলেও মনে করেন নজরুল ইসলাম।

সিলেটে মেয়র পদে এখন পর্যন্ত ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম বাবুল ছাড়া বাকিরা হলেন হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা), মো. জহিরুল আলম (জাকের পার্টি); স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান, সামছুন নুর তালুকদার, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, মাওলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মো. শাহজাহান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।

আরিফুল হক প্রার্থী না হলে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ অনেকটা কমে যাবে উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেট সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আরিফুল হক বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি ও তার দল না এলে নির্বাচন অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে পড়বে; মানুষের আগ্রহ কমবে।’

এ অবস্থায় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে হাজির করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ২০১৩ সালে তৃতীয় ও ২০১৮ সালের চতুর্থ নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। ৪টি নির্বাচনেই মূল প্রতিদ্বিন্দ্বিতা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে। অন্য দলীয় বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সামান্য প্রতিদ্বিন্দ্বিতাও তৈরি করতে পারেননি।

২১ জুন ইভিএমে পঞ্চম সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৩ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে ২৫ মে পর্যন্ত। ১ জুন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।

 

 

আমাদের কাগজ/টিআর