জাতীয় ১৮ মে, ২০২৩ ০৭:১১

সুইসাইড করতে চাওয়া জাহ্নবী এখন ‘ফোর্বসের’ তালিকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: '২০১৯ সাল, রুয়েটের সেকেন্ড ইয়ার। একটা ম্যাথ কোর্সেও পাস করিনাই। নোটিশ দিলো, ঐ ইয়ারের সহ নাকি তিনটা ব্যাকলগ দেওয়া লাগবে। ক্লাস, ল্যাব। তার উপর আমার পার্ট টাইম খ্যাপ মারা আপওয়ার্কের প্রজেক্টের ডেডলাইন। পদ্মার পাড়ে বইসা ভাবতেছিলাম, সাঁতার জানিনা, লাফ দিলে কি মইরা যাব' বলছিলেন জাহ্নবী রহমান।

জাহ্নবী জনপ্রিয়‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনের তৈরি করা এশিয়ার ৩০ বছরের কম বয়সী উদ্যোক্তা ও সমাজ পরিবর্তনকারীর (চেঞ্জমেকার) তালিকায় জায়গা পাওয়াদের একজন ও রিলাক্সির সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

সেদিন লাফ দিলেও শত ভাগ মারা যাবেন এমন নিশ্চয়তা না পেয়ে আত্মহত্যার রাস্তা থেকে ফিরে এসেছিলেন জাহ্নবী।

ফোর্বসের তালিকায় নিজের নাম দেখে কেমন লাগছে এমন প্রশ্নের জবাবে জাহ্নবী রহমান বলেন, "সকাল ৫টা ২৪ মিনিটে মেইলটি দেখার পর গত ৫ বছরের একটি ফ্ল্যাশব্যাক চোখের সামনে ভেসে ওঠে।"

তিনি বলেন, 'এ অর্জন শুধু আমার নয়। যারা নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে লড়াই করে তাদের জন্য এটি আমার অর্জন। আগামী দিনে, রিল্যাক্সি এবং জাহ্নবী এই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করবে যে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে কোনও ব্যক্তিকে একা বা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত বোধ করা উচিত নয়,' তিনি তার আশ্বাস ব্যক্ত করেন।

২০১৯-২০২১ এই ৩ বছর অনেকবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছেন জাহ্নবী, কিন্ত বারবার নিজের মায়ের চেহারাটা সামনে চলে আসায় সে যাত্রায় ফিরে আসেন মৃত্যু পথ থেকে। একটা সময় তিনি উপলব্ধি করলেন, 'আশপাশে এমন অনেক বন্ধু, শিক্ষক এবং মানুষজন আছেন যারা সাপোর্ট তো করে না, উলটো আরও এটা মাথায় ঢুকিয়ে দেয় যে, মরে গেলে বেঁচে যাব'।

এই কষ্ট ও হতাশা যাতে আর কাউকে পেতে না হয়, সেই চিন্তা থেকে ২০২১ এর নভেম্বরে রিল্যাক্সি শুরু করেন। রিলাক্সির যাত্রা শুরুর গল্প জানতে চাইলে, তিনি এক মুহূর্তে ফিরে যান অতীতে।

অতীত স্মৃতি থেকে জাহ্নবী জানান, ২০১৯ সাল থেকে নাইমুল হক জয়, সামিউল ইসলাম স্বপ্নিল ও জাহ্নবী রহমান একসাথে কাজ করছেন। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট),গাজীপুর থেকে পড়াশোনা করেন স্বপ্নিল ও জাহ্নবী, আর জয় পড়াশোনা করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে।

শুরুর দিকে তারা ১৮ বছরের কম বয়সী তরুণ-তরুণীদের নিয়ে গ্যামিফিকেশ (অনুর্ধ্ব ১৮ বয়সীদের সফট স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) শুরু করেন। এই প্রোগ্রামের আওতায় তাদের । ২০২১ সালে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) কিছু আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর তারা অনুভব করলেন,১৮-৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি। ফলে তাদের বেশি সাপোর্ট প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বড় অবহেলা রয়েছে।

এই চিন্তা থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন রিলাক্সি।  ২০২২ এর জুলাইয়ে তারা প্লে স্টোরে তারা রিলাক্সি নামে একটি অ্যাপ চালু করেছিল। এখন পর্যন্ত অ্যাপটি ডাউনলোড হয়েছে ১৮ হাজারের বেশি। অ্যাপসটি নিয়মিত ব্যবহার করছেন ৪ হাজারের বেশি। এর মাধ্যমে মানুষ বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, কোনো সমস্যা শেয়ার করলে বিশেষজ্ঞরা তাদের পরামর্শ দেন।


আমাদেরকাগজ/এইচএম


আমাদেরকাগজ/এইচএম