জাতীয় ৪ মে, ২০২৩ ০৬:৪০

লক্ষ্মীপুরে নোমান-রাকিব হত্যাকাণ্ড

৪০-৪৫ জন দুর্বৃত্ত ৫টি দলে ভাগ হয়ে হত্যায় অংশ নেয়

আমাদের কাগজ রিপোর্ট: লক্ষ্মীপুরে সাবেক যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম হত্যাকাণ্ডে ৪০-৪৫ জন্য দুর্বৃত্ত অংশ নেয়। হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে ঘটনাস্থলের আশপাশে অবস্থান করে।

এক ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে আসে। সে সবার হাতে একটি করে অস্ত্র তুলে দেয়। কার্যক্রম ঠিক করে দেয় ওই ব্যক্তি। অস্ত্রের মধ্যে বন্দুক ও পিস্তল ছিল। হত্যাকাণ্ড শেষে অস্ত্রগুলো ওই ব্যক্তির কাছে আবার জমা দেয় তারা।

নোমান ও রাকিব হত্যার দায় স্বীকার করে দুজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গতকাল বুধবার মামলার ১৮ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি আলমগীর হোসেন এবং এর আগে দিন গত মঙ্গলবার ৩ নম্বর আসামি দেওয়ান ফয়সাল ওই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। চন্দ্রগঞ্জ আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুল কবীর তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

ফয়সাল রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তাঁকে স্থায়ীভাবে দল থেকে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে সুপারিশ করে জেলা কমিটি। আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বেলাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ইমতিয়াজ এ তথ্য জানিয়েছেন।

আলমগীর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উত্তর মাগুরী গ্রামের আবু কালামের ছেলে। তিনিও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

দুই আসামির স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দির সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় বশিকপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট বাজারের কাছে একটি ফাঁকা মাঠে বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ৪০-৪৫ জন। আটজনের একটি দল পোদ্দার বাজারসংলগ্ন নাগেরহাট সড়কের করাতকলের কাছে অবস্থান করে। এই দলটি ঘটনাস্থলে করাতকলের পাশে প্রায় ৪৫ মিনিট ওত পেতে থাকে। নোমান-রাকিব ঘটনাস্থলে পৌঁছালেই গুলি করে। রাকিব গুলিবিদ্ধ হয়ে করাতকালের পাশে পড়ে যান। নোমান সাত-আটটি লাফ দিয়ে পালাতে থাকেন। তিনজন মিলে তাঁকে ধরে গুলি করে হত্যা করে।

দুই আসামির স্বীকারোক্তি নিয়ে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ গতকাল বুধবার ও গত মঙ্গলবার প্রেস বিফ্রিং করে। তিনি বলেন, ফয়সাল ও আলমগীর দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডে আলমগীর নিজেও পিস্তল ব্যবহার করেছেন। ফয়সাল ব্যবহার করেছেন বন্দুক। ঘটনা শেষে অস্ত্রগুলো পরিকল্পনাকারী ব্যক্তির কাছে দিয়ে দেন।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে আলমগীরসহ যে আটজনকে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় তিনি জবানবন্দিতে জানিয়েছেন। ৪০-৪৫ জনের নামও বলেছেন। ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের পর একটি বিয়ের গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরে রামগঞ্জে অবস্থান করেন, আত্মগোপনে চলে যান। তাঁকে ঠাকুরগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

পুলিশ সুপার জানান, আলমগীর ২০১৩ সালের দিকে সন্ত্রাসী মাসুম বিল্লাহ লাদেন বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তিনি ২০১৫ সালের দিকে আবুল কাশেম জিহাদীর বাহিনীতে যোগ দেন।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাহিদুল ইসলাম বলেন, নোমান-রাকিব হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত দুজন আসামি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নোমান ও রাকিবকে হত্যার পরদিন রাতে নিহত নোমানের বড় ভাই ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর থেকে র‍্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সূত্র: প্রথম আলো।

 

 

আমাদের কাগজ/টিআর