সারাদেশ ২৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০৮:৪৬

ভেসে আসা ট্রলার থেকে ১০ লাশ উদ্ধার: পুলিশ নেয়নি জিডি

কক্সবাজার প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজারের নাজিরারটেক পয়েন্টে ভেসে আসা ট্রলার থেকে পাটাতন কেটে একে একে বের করা হয় ১০ জনের মরদেহ। দীর্ঘ সময় ধরে ট্রলারের বরফ রাখার স্টোরে হাত-পা বেঁধে আটকে রাখায় পচে গলে এমন অবস্থা হয়েছিল যে চেহারা বা শরীরের অবয়ব দেখে বুঝার উপায় ছিল না কোনটা কার মরদেহ। মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে সেদিন রাতেই কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে ভিড় করেছিলেন স্বজনরা। দফায় দফায় দেখার পরও প্রিয়জনের মরদেহ শনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তাই প্রশাসন ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া মরদেহ হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

শেষ পর্যন্ত পরনের কাপড় দেখে শনাক্ত করতে পারায় এবং একাধিক দাবিদার না থাকায় ১০ জনের মধ্যে ৬টি মরদেহ হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। স্বজনরা সঠিকভাবে শনাক্ত করতে না পারায় এখনো মর্গে পড়ে আছে আরেও চারজনের মরদেহ।

নিহতদের মধ্যে যে ৬ জনের মরদেহ পরিবার পেয়েছে তাদের মধ্যে ওসমান গণি একজন। তার বোন জেসমিন আকতারের দাবি, ওসমান সাগরে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তারা দফায় দফায় মহেশখালী থানায় গিয়েছিলেন, কিন্তু থানায় কোনো অভিযোগ বা সাধারণ ডায়েরি নেয়নি তাদের। কোস্ট গার্ড প্রত্যয়ন নিয়ে যেতে বলায় তারা দফায় দফায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছেও ধর্না দেন। কিন্তু তাদের উল্টো অপমান করা হয়। তার দাবি, জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন কেউই তাদের সহযোগিতা করেনি।

নিহত আরেক কিশোরের স্বজন আয়াত উল্লাহ দাবি করেন, পুলিশ জিডি না নেয়ার পর তারা সাংবাদিক সম্মেলন করেন। কিন্তু সাংবাদিকরা টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। কেউ নিউজ করেনি।

তার দাবি সাধারণ ডায়েরি বা অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসন তাৎক্ষণিক উদ্ধারে তৎপর হলে তারা মরদেহ অন্তত চেহারা দেখে শনাক্ত করতে পারতেন।

থানায় জিডি না নেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, কেন জিডি নেয়নি সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কোনো গ্যাপ থাকে তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে ওই ঘটনায় নিহত ট্রলারের মালিক শামসুল আলমের স্ত্রী বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এই মামলার ১ নম্বর আসামি বাইট্টা কামাল ও ৪ আসামি করিম শিকদারকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, আটক দুই আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। বাকিরাও দ্রুত আটক হবে বলে জানায় পুলিশ।

গত ৭ এপ্রিল সাগরে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর ২৩ এপ্রিল মরদেহ উদ্ধার করা হয় ১০ জনের। এরমধ্যে কিশোর ছিল পাঁচজন।

আমাদেরকাগজ/এইচএম