জাতীয় ২৮ মার্চ, ২০২৩ ১০:৩০

ঈদযাত্রা নিয়ে এবারও শঙ্কা

আমাদের কাগজ রিপোর্ট: ঈদ এলেই যানবাহনের চাপ বাড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কের দুটি লেনে দাঁড়িয়ে থাকে হাজার হাজার গাড়ি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এবারও একই দুর্ভোগে পড়তে হবে এই মহাসড়কে যাতায়াতকারীদের।

এর অন্যতম কারণ গত কয়েক বছর ধরে চলছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের চারলেনের উন্নয়নকাজ। উন্নয়নকাজের কারণে এবারও ঈদুল ফিতরে ঘরে ফেরা মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু সেতুু হয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২২ জেলার যানবাহন চলাচল করে সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক দিয়ে। এই মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড় থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ১৪টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যে এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থান সংস্কার করতে ঠিকাদারকে তাগিদ দিয়েছে জেলা পুলিশ।

বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের চারলেনের উন্নয়নকাজ চলছে। সড়কের দুই পাশে মাটিভরাট করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। কোনও কোনও স্থানে কাজ চলার কারণে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন অন্য লেনে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। কখনও ধীরগতি, কখনও থেমে থেমে, আবার কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

এদিকে, নবনির্মিত নলকা সেতুর উত্তর লেন খুলে দিলেও ঢাকামুখী লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকামুখী লেন বন্ধ করে দেওয়ায় পুরনো সেতু দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

তবে উন্নয়নকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে বলে জানালেন সওজের সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। মহাসড়কের যেসব স্থানে খানাখন্দ রয়েছে, সেগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে। সলঙ্গা বাজার, দাদপুর বাজার, ঘুড়কা বাজার, ভূইয়াগাঁতী বাজার ও চান্দাইকোনা বাজার এলাকায় চারলেনের নতুন সড়ক ১৫ রমজানের মধ্যে খুলে দেওয়া হবে। সড়ক খুলে দিলে আশা করা যায়, যানজট কিছুটা কমবে।’

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদরুল কবির বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো ১৫ রমজানের মধ্যে সাসেক-২-এর কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করে দিতে বলেছি আমরা।’ 

তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদে আমাদের ১০টি মোবাইল টিম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করবে। পাশাপাশি ১৬টি পিকেট টিম (জায়গায় দাঁড়ানো) ১৬টি স্থানে কাজ করবে। সবমিলিয়ে ঈদে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে আমাদের মোট ১৪৪ জন পুলিশ সদস্য কাজ করবেন।’

সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান সালেক বলেন, ‘ঈদুল ফিতরে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে ট্রাফিক পুলিশের ১৫ থেকে ১৮টি মোবাইল টিম মাঠে থাকবে। তবে ঈদে মহাসড়কে কতজন ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে, এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ মহাসড়কের ১৪টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি আমরা। প্রকল্প এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। ১২ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সংস্কার করে দেবে তারা। তবে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের কাজ চলমান থাকায় কিছুটা দুর্ভোগে পড়তে হবে যাত্রীদের।’ 

ঈদে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে মহাসড়কে কতজন পুলিশ সদস্য কাজ করবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখনও যেহেতু সময় আছে, তাই এই বিষয়ে বৈঠক করে পরে সিদ্ধান্ত নেবো আমরা।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালে শুরু হয় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের চারলেনের সম্প্রসারণকাজ। কাজে ধীরগতির কারণে গত ঈদগুলোতেও বিড়ম্বনায় পড়েন উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা। যানবাহনের চাপ বাড়ায় নিয়ন্ত্রণে বিপাকে পড়ে জেলা ও ট্রাফিক পুলিশ। এবারও একই পরিস্থিতির শঙ্কায় রয়েছেন চালক ও যাত্রীরা।

ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জগামী জেনিন পরিবহনের চালক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এবারও ঈদযাত্রায় ভোগান্তিতে পড়তে হবে আমাদের। কারণ গত কয়েক বছর ধরে চলছে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের চারলেনের কাজ। ধীরগতির কারণে কাজ শেষ হচ্ছে না। কাজ শেষ হলে স্বস্তি মিলবে।’ 

 

 

 

 

আমাদের কাগজ/টিআর