জাতীয় ২১ মার্চ, ২০২৩ ১২:১৪

২০২২ সালে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা কমেছে

আমাদের কাগজ রিপোর্ট: দেশে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা কমেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। দেশে গত সাড়ে চার বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ৭৯১টি।

এর মধ্যে ক্রসফায়ারে (বন্দুকযুদ্ধ) নিহত হওয়ার ঘটনা ৬৮৩টি। একই সময়ে ৪৩ জনকে গুলি করে হত্যা, ৪৪ জনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আর ২১ জন নিহত হয়েছেন পুলিশ হেফাজতে। এছাড়া ৫৬ জন গুম হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৭ জন এখনো নিখোঁজ ও ২৯ জনকে আটক দেখানো হয়েছে, মুক্তি পেয়েছেন ১০ জন।

সোমবার (২০ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২০টি মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) আয়োজিত জাতীয় পরামর্শ সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ১০টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ৭৯১ জনের তালিকা সরকারকে দেওয়ার অনুরোধ করেন। 

তিনি বলেন, “গুমের ২৮টি অভিযোগ খতিয়ে দেখছে সরকার। সরকারের কাছে জাতিসংঘের দেওয়া ৭৮ জনের তালিকার মধ্যে ১০ জনের পরিবার পুলিশকে সহায়তা করছে না, আর ১০ জনকে খুঁজে পাওয়া গেছে।”

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা কমেছে, এটি একটি ইতিবাচক দিক। তবে কমে এসেছে বলছি, শেষ হয়ে গেছে তা কিন্তু কেউ বলছে না। বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ অন্যান্য ঘটনা যাতে না ঘটে, তার কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব যেসব প্রতিষ্ঠানের, দলীয় রাজনীতিকরণসহ নানা কারণে সেগুলোর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে মানবাধিকার রক্ষার চেয়ে অপরাধকারীদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রসঙ্গ তুলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এই আইন কেন বাতিল করা প্রয়োজন, তা তথ্য–উপাত্ত দিয়ে সরকারকে জানানো হয়েছে। আইনটি ঝুঁকিপূর্ণ। আইনটিকে ঢেলে সাজানো হলেও তা কাজে আসবে না।”

সভায় আসকের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ অন্যান্য ঘটনা ঘটছে। ক্রসফায়ার স্বীকৃত সত্য, প্রতিনিয়ত ঘটছে। সংখ্যাকে প্রত্যাখ্যান না করে বিষয়গুলোকে আরও গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে। এগুলো দেশে ঘটছে কি-না, ঘটে থাকলে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনে তো বাধা থাকার কথা না। কমিশন যদি মনে করে ঘটনা ঘটেছে, তাহলে চিহ্নিত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনবে।”

জাতিসংঘের প্রতিনিধি উমা খান বলেন, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কতটুকু অগ্রগতি হলো, তা মনিটরিংয়ের জন্য একটি ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করার যে সুপারিশ, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে মেকানিজম (কৌশল) তৈরির বিষয়ে তিনি গুরুত্ব দেন।

ইউপিআর প্রতিবেদন হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থার একটি অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া; যার আওতায় এ সংস্থার ১৯৩টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সাড়ে চার বছর পরপর পর্যালোচনা করা হয়। পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করে প্রতিটি দেশের সরকার। সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয় জাতিসংঘের কাছে। বাংলাদেশের চতুর্থ পর্বের ইউপিআর প্রতিবেদন প্রণয়নের অংশ হিসেবে এ খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইন ও অফলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কমেছে। হয়রানির ভয়ে অনলাইন একটিভিস্টরা সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে স্ব-সেন্সর আরোপ করছে।

গত এপ্রিলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮৯০টি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এতে কমপক্ষে ২ হাজার ২২৪ জনকে অভিযুক্ত করেছেন। গড়ে প্রতি মাসে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩২ জন। 

মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তর বলছে, বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরা বছরজুড়ে তাদের সংগঠনিক কাজে বাধা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

 

 

আমাদের কাগজ/টিআর