আমাদের কাগজ ডেস্কঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হল ১৯৭১ সালে সংগঠিত দক্ষিণ এশিয়ার একটি বৈপ্লবিক স্বাধীনতা সংগ্রাম যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। স্বাধীনতা সংগ্রামটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের এবং যুদ্ধটি নয় মাস স্থায়ী হয়েছিল। যুদ্ধটির মাধ্যমে বিশ্ব বিশাল এক নির্মমতার স্বাক্ষী হয়, প্রায় এক কোটি মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হন।
তথ্য অনুযায়ী, আজ রাশিয়ার (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী। রাশিয়া বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখেছিল। এজন্য বাংলাদেশ রাশিয়ার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় থেকে রাশিয়া এ দেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তা না পেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন কঠিন হতো।
বর্তমানে বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্ক বলতে মূলত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এবং রুশ ফেডারেশনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বোঝায়। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তার উত্তরসূরি রাষ্ট্র রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চালু রয়েছে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে অবদান রাখছে
আমরা অনেকেই জানি, সে সময়ে বিশ্ব প্রধানত দুই শিবিরে বিভক্ত ছিল। এক শিবিরের নেতৃত্ব দিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অপর শিবির নিয়ন্ত্রণ করত সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়ন সে সময় নীতিগত কারণে বিভিন্ন দেশের মুক্তিসংগ্রামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা দিয়ে যেত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ২৫ মার্চ গণহত্যার প্রেক্ষাপটে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগোর্নি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে প্রেরিত এক বার্তায় পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক প্রাণহানি, নিপীড়ন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দমন-পীড়ন বন্ধ করে একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের উপায় উদ্ভাবনের জন্য তিনি ইয়াহিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। শীর্ষ দুই দেশের একটির তরফ থেকে এমন বার্তা মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ সঞ্চার করে।
যুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সামরিক ও আর্থিক সহায়তা এবং সামগ্রিকভাবে নৈতিক সমর্থন প্রদান করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষদিকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে প্রায় পরাজিত পাকিস্তানকে সহায়তা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে তার সপ্তম নৌবহরকে প্রেরণ করে। এর প্রত্যুত্তরে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর প্রতি সম্ভাব্য মার্কিন হুমকি প্রতিহত করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর এবং ১৩ ডিসেম্বর ভাদিভস্তক থেকে সোভিয়েত প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের দুই স্কোয়াড্রন ক্রুজার ও ডেস্ট্রয়ার এবং পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত একটি পারমাণবিক ডুবোজাহাজ প্রেরণ করে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পর ১৯৭২ সালের ২৪শে জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। পরেরদিন ২৫শে জানুয়ারি দুইদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয়।
আমাদের কাগজ/এমটি