মুক্তমত ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ১০:৫৭

২৫ বছর পর পরিবার খুঁজে পেলেন সৌদিফেরত বৃদ্ধ প্রবাসী

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

আমাদের কাগজ ডেস্কঃ 'এটা হতে পারতো সিনেমার দৃশ্য বা গল্পের কোন শিরোধার্য মুহূর্ত', কিন্তু তা নয়। দীর্ঘ ২৫ বছর পর দেশে ফেরত এসে এক বৃদ্ধ অভিবাসী তার পরিবারের ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। তার কাছে ছিল না পাসপোর্টও। অনেক কিছু ভুলে গিয়েছিলেন। অবশেষে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় সেই বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে দেখা হলো সন্তানদের। 

কিছুটা অলৌকিক মনে হলেও সত্যি। চট্টগ্রাম থেকে গতকাল বুধবার তারা ঢাকায় এসে পৌঁছান। এরপর বিকেলে আবুল কাশেম নামের ওই বৃদ্ধকে তার পুত্র ও কন্যাসহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান। বিকেলে তারা চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন।

এ সময় এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক স্কোয়াড্রন লিডার মো. রাসেল তালুকদার, সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান রনি এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক মো. ফখরুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে সৌদি আরব থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেছিলেন ঐ বৃদ্ধ। কিন্তু তিনি নিজের ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। তার কাছে পাসপোর্টও ছিল না। অনেক কিছু ভুলে গিয়েছেন। এরপর বিমাবন্দরের পুলিশ তাকে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে পাঠায়। তার খোঁজ পেতে ব্র্যাকের কর্মীরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর শুরু করেন। গণমাধ্যমেও বিষয়টি জানানো হয়। এরপর চট্টগ্রামের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়রের সহায়তায় তার পরিবারের সন্ধান মেলে।

তবে তিনি ঠিকানা বলতে না পারলেও স্ত্রী ও তিন ছে‌লের নাম বলতে পারছিলো। ব‌লে‌ছি‌লেন, ঈদগাহ মাঠের বউ বাজার এলাকায় তার ছেলের তরকারির দোকান আছে। তিনি জানান, আঞ্চ‌লিক ভাষা শুনে বুঝতে পেরেছিলাম তার বাড়ি চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ব্র‌্যা‌ক তার ছবিসহ শত শত পোস্টার চট্টগ্রামে বিলি ক‌রে। তা দে‌খে চট্টগ্রাম সি‌টি কর‌পো‌রেশ‌নের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার সহযোগিতায় আবুল কা‌শেমের ছেলে সবজি ব্যবসায়ী নূর হাসানের খোঁজ মে‌লে। প‌রে আবুল কা‌শেমের অন‌্য সন্তান ও তার স্ত্রী‌র সন্ধান পাওয়া যায়।

আবুল কাশেমের বড় ছেলে নূর হাসান বাবাকে ফিরে পেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ব্র্যাকসহ সবার কাছে কৃতজ্ঞতা। অনেকদিন ধরে বাবার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল না। জানতাম না তিনি সৌদির কোথায় আছেন। তিনি যে দেশে এসেছেন, তাও জানতাম না।

বাবা‌কে নি‌তে বুধবার সকালে চট্টগ্রাম থে‌কে ঢাকায় আ‌সেন আবুল কা‌শে‌মের স্ত্রী-সন্তানরা। তার মেয়ে পারভীন আক্তার বলেন, বাবা ২৫ বছর আগে সৌদি আরব যায়। তখন আমার ছোট বোন রুমা মায়ের পেটে। বাবার সঙ্গে আমাদের স্মৃতি খুব কম। বাবাকে ফেরত পাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।

হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বি‌কে‌লে আবুল কা‌শেম‌কে নি‌য়ে চট্টগ্রা‌মের উ‌দ্দে‌শ্যে রওনা তার সন্তানরা। এসময় এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক স্কোয়াড্রন লিডার মোঃ রাসেল তালুকদার প্রমুখ উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

আমাদের কাগজ/এমটি