কৃষি ১০ জানুয়ারি, ২০২৩ ১২:৩৯

আলু তুলেই চলে তাদের সংসার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় গত এক মাস ধরে কৃষি ক্ষেতে চলছে আলু তোলার কাজ। আলু তোলার কাজ ঘিরে আয়ের সুযোগ হয়েছে হাজারো মানুষের। এই টাকায় চলে তাদের সংসার। গত দুই দিনে উপজেলার আট ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষেত থেকে আলু তোলার কাজ করে আয় করছেন নারীরাও। চুক্তিভিত্তিক মাঠে আলুর বস্তা সেলাই করছেন কিছু শ্রমিক। সেলাই করার পর আলুর বস্তা বাজারে পৌঁছে দিচ্ছেন ভ্যানচালকরা। সেই আলু ট্রাকে তুলে দিচ্ছেন লোড-আনলোডের শ্রমিকরা। প্রতিটি ধাপে আয় করছেন নারী, ভ্যানচালক ও শ্রমিকরা। টানা দুই মাস চলবে আলু তোলার কাজ।

বড়বাড়ী ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের জিল্লুর রহমানের স্ত্রী রিমি আক্তার। গেলো বছর আলু তোলার কাজ করে সাড়ে চার হাজার টাকা আয় করেছিলেন। এ বছর ২০ টাকা দরে প্রতি বস্তা তুলে আয় করেছেন তিন হাজার টাকা। তার মতো ওই গ্রামের শতাধিক নারী বাড়ির কাজ শেষে প্রতিদিন তিন-চার ঘণ্টা আলু তোলার কাজ করে আয় করছেন।

নারীদের আলু তোলার পর বস্তা সেলাইয়ের কাজ করেন আব্দুস সালাম। প্রতিদিন ৫০-৬০টি বস্তা সেলাই করে তিনি ৫০০ টাকা মজুরি পান। তার মতো উপজেলার আট ইউনিয়নের দুই শতাধিক শ্রমিক আলুর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বস্তা সেলাইয়ের কাজ পেয়েছেন। 

সালাম জানান, ইটভাটায় মজুরি দিতেন তিনি। এ বছর ইটভাটাগুলো চালু হয়নি। তাই কর্মহীন ছিলেন। বস্তা সেলাইয়ের কাজ কর্মহীনতা দূর হয়েছে তার।

বড়বাড়ী ইউনিয়নের ধনিবস্তী গ্রামের ভ্যানচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘মাঠ থেকে প্রতি বস্তা আলু আড়তে আনতে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া পাওয়া যায়। গ্রামের বেশির ভাগ ভ্যানচালক এখন দুপুরের পর আলুর বস্তা আড়তে পৌঁছানোর ভাড়া টানেন। আলুর মৌসুমে প্রত্যেক ভ্যানচালক দিনে তিন-চার ঘণ্টা ভাড়া টেনে আয় করেন। পুরো বছরে দিনরাত পরিশ্রম করেও এমন আয় সম্ভব নয়।’

আলু ব্যবসায়ী দুলাল চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি বস্তা আলু ট্রাকে তুলতে শ্রমিকরা ১২ টাকা করে নেন। একটি ট্রাকে ২২০টি বস্তা তোলার পর ট্রাকচালকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা বকশিশ পান তারা। এলাকার প্রতিটি আড়তে প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক এক মাস ধরে নিয়মিত এই কাজ করছেন।’

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় গেনুলা, স্টিক ও সেভেন জাতের আলু আবাদ হয়েছে। তিন ধরনের আলুতে বীজের মূল্য এবং পরিচর্যা অনুযায়ী উৎপাদন খরচের বেশ তারতম্য রয়েছে। গেনুলা জাতের আলুতে প্রতি বিঘায় চাষাবাদে ২৮-৩০ হাজার টাকা, স্টিক ও সেভেন জাতের আলুতে ৩৫-৩৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল বলেন, ‘চলতি বছর উপজেলায় তিন হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আলু তোলার কাজ শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলবে আলু তোলার কাজ। শুরুতে দাম কম থাকলেও এখন মোটামুটি আলুর দাম ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।’

আমাদেরকাগজ/ এইচকে