উন্নয়ন সংবাদ ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৯:১৭

অপেক্ষা শেষে স্বপ্নের মেট্রোরেলে উঠতে দীর্ঘ সারি

আমাদের কাগজ রিপোর্টঃ দীর্ঘ অপেক্ষার পর গতকাল বুধবার মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের দরজা খুলছে সাধারণ মানুষের জন্য। সকাল ৮টায় যাত্রা শুরু করার মাধ্যমে অভিষেক ঘটেছে নতুন এ গণপরিবহনের। প্রথম দিনে অনন্য এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে ভোর থেকেই মেট্রো স্টেশনের সামনে সামনে ভিড় জমিয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

সকালে রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মেট্রোরেলে চড়তে ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন যাত্রীরা, এমনকি অনেকেই রাত থেকেও অপেক্ষা করেছেন সেখানে। তবে এই যাত্রীদের অধিকাংশই মেট্রোরেলে শুধু ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্যই এসেছেন।


মেট্রোরেলে চড়ার অভিজ্ঞতা নিতে বসিলা ঘাটারচর থেকে আগারগাঁওয়ে এসেছেন মো. সাব্বির আহমেদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশে প্রথম মেট্রোরেল চালু হলো, সেটাতে চড়ার অভিজ্ঞতা নিতেই এখানে আসা। ভোরেই রওনা দিয়েছিলাম। আসতে আসতে দেখি অনেকেই আগে থেকেই এসে লাইনে অপেক্ষা করছেন।’ আজ মেট্রোরেলে চড়তে পারলে জীবনে ‘এক ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা হবে’ বলেও উল্লেখ করেন এই যুবক।

৭ বছর বয়সী ছেলের মেট্রোতে চলার আবদার মেটাতে সপরিবারে গুলশান থেকে এসেছেন মোহাম্মদ হাবিব এক করপোরেট চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা খুবই আনন্দের বিষয় আমাদের জন্য যে, আমরাও এখন আধুনিক রাষ্ট্রে রূপান্তর হচ্ছি। ছেলে সপ্তাহখানেক ধরে টিভিতে মেট্রোর প্রচার-প্রচারণা দেখে আগ্রহ করেছে চড়ার। সেই আবদার মেটাতেই সকাল ৭টা থেকেই অপেক্ষা করছি।’

সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সচক্ষে দেখতে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন বলে দাবি করেন সোলাইমান নামে এক ব্যক্তি। পেশায় একজন হোটেল কর্মচারী। গুলিস্তান থেকে রাতেই রাজধানীর কাওরান বাজারে চলে আসেন তিনি। এরপর সেখানে কোনওরকম রাত পার করে ভোরের দিকে চলে আসেন আগারগাঁওয়ে। তবুও কিছুটা দেড়ি করে ফেলেছেন। সোলাইমান বলেন, 'আমি পদ্মা সেতুতে ওঠার জন্য আগের দিন রাতেই পত্রিকা বিছিয়ে রাস্তায় ঘুমিয়ে ছিলাম। কর্নফুলি টানেলে যাইতে না পারলেও আশপাশে ঘুরছি। এখন মেট্রোরেলে চড়তে গতকাল রাতেই চলে আসছি, যেন দেরি না হয়।’ 

কীভাবে মেট্রোরেলে চড়তে হয় তা জানা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সবাই যেভাবে চড়বে, আমিও সেভাবেই চড়বো।'

শুধু সোলাইমানই নয় অধিকাংশ আগত যাত্রী মেট্রোরেলের চড়ার নিয়ম সম্পর্কে তেমন অবগত নন। তবে তারা আশা করছে কোনও ঝামেলা ছাড়াই মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন।


জানা গেছে, প্রতিদিন ১০ মিনিট পর ট্রেন ছাড়বে। ট্রেন চলবে মোট ১০টি। মেট্রোরেল উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের মাঝে কোথায় আপাতত থামছে না।

সাধারণ যাত্রীদের জ্ঞাতার্থে কর্তৃপক্ষ জানায়, মেট্রোরেলে কোনও ধরনের পোষা প্রাণী বহন করা যাবে না। বিপজ্জনক বস্তু বহন করা যাবে না। মেট্রোর প্ল্যাটফর্মে পানের পিক বা থু থু ফেলা যাবে না। প্ল্যাটফর্ম ও মেট্রো ট্রেনে খাওয়া দাওয়াও নিষেধ। প্ল্যাটফর্মের কোথাও কোনও ময়লা ফেলা যাবে না।

মেট্রোরেলে ওঠা-নামার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। কোচের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ানো যাবে না। মোবাইল ফোনের স্পিকার অন করে রাখা যাবে না এছাড়া নিচু স্বরে কথা বলতে হবে।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ট্রেনের উঠার আগে স্টেশন থেকে একক যাত্রার কার্ড ও র‌্যাপিড পাস কার্ড নেওয়া যাবে। একক যাত্রার কার্ড মাত্র ৩০ সেকেন্ডে টিকিট কাউন্টার ও টিকিট বিক্রয় মেশিন থেকে নেওয়া যাবে। আর র‌্যাপিড পাস কার্ড নেওয়ার জন্য ফরম ওয়েবসাইট ও স্টেশনে পাওয়া যাবে।

এর আগে  বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে বহুল প্রতীক্ষিত ও দেশের প্রথম মেট্রোরেলের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে মেট্রোর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। টিকিট কেটে পরের ট্রেনে প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন ও জাতির জনকের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

মেট্রোরেলকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার মুকুটে আরেকটি পালক বলে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের অহংকারের আরেকটি পালক সংযোজন করতে পারলাম। এটাই বড় কথা।’