আমাদের কাগজ রিপোর্ট: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে রাশিয়া। গত বৃহস্পতিবার রাজধানী মস্কোতে এক ব্রিফিংয়ে এ অভিযোগ করেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। ঢাকায় অবস্থিত রুশ দূতাবাস আজ রোববার এ তথ্য জানিয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ‘বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করেছি। অভিযোগ উঠেছে, ২০১৩ সালে নিখোঁজ বিরোধীদলীয় এক রাজনৈতিক কর্মীর পরিবারের সঙ্গে গত ১৪ ডিসেম্বর দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর একটি সংগঠনের হুমকির মুখে পড়েছিলেন। পরে তিনি নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় সেখান থেকে বেরিয়ে যান।’
মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘একজন মার্কিন কূটনীতিক যখন বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারের বিষয়ে যত্নবান হওয়ার কথা বলে দেশটির অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন, তখন এমন ঘটনাই প্রত্যাশিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা মৌলিক নীতিগুলোকে লঙ্ঘন করে। এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়।’
জানা গেছে, গত ১৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যান বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তবে সেখানে কথাবার্তার একপর্যায়ে তিনি তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যান বলে জানা যায়।
ঢাকা মহানগরের ৩৮ নম্বর (বর্তমান ২৫) ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরিবারের দাবি, তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর থেকেই সুমনের মেজো বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি ভাইকে খুঁজতে থাকেন। বর্তমানে তিনি গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, নিখোঁজ সুমনের বোন আঁখির সঙ্গে দেখা করতেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাজধানীর শাহীনবাগের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি প্রায় ২৫ মিনিটের মতো অবস্থান করেন। ওই সময় তিনি সুমনের পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন। কথা চলাকালেই তিনি তাড়াহুড়ো করে ওই বাসা থেকে বের হয়ে যান। এ সময় তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। ওই সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বাংলাদেশ ডেস্কের কর্মকর্তা লিকা জনসন।
এর আগে সুমনের বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আসছেন—এমন খবরে ওই এলাকায় উপস্থিত হন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ‘মায়ের কান্না’ নামের সংগঠনের ব্যানারে কিছু মানুষ সেখানে জড়ো হন। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি, কারাদণ্ড, চাকরিচ্যুত সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’। তারা বাসার সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাসায় ঢোকার সময় তারা প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন। তিনি চলে যাওয়ার সময় শুরু হয় হট্টগোল।
ওইদিন বিকেলে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দূতাবাসের মুখপাত্র জেফ রিডেনর জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আঁখির বাসা থেকে দ্রুত চলে এসেছিলেন। এ বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছে মার্কিন দূতাবাস।
আমাদের কাগজ/টিআর