মুক্তমত ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০৬:৩০

কে এই হোলি আর্টিজানের সংবাদদাতা রিটা কার্টজ?

ইমরান রহমান।।

রিটা কার্টজ একজন ইরাকি বংশোদ্ভূত আমেরিকান। ধর্মে ইহুদি। পুরো বিশ্বে যেকোন জঙ্গী হামলার তথ্য সবার আগে জানানোর জন্য বিখ্যাত আলোচিত ওয়েব পোর্টাল সাইট ইন্টিলিজেন্সের পরিচালক। পড়াশোনা করেছেন তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইংরেজি, হিব্রু ও আরবী ভাষায় তার ব্যাপক দখল রয়েছে।

তিনি যেসব লোমহর্ষক বিষয় নিয়ে কাজ করেন। স্বাভাবিক দৃষ্টিকোনে অনেকে হয়তো চিন্তাই করতে পারবে না। তার সংগঠন সাইট ইন্টিলিজেন্স পুরো বিশ্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করে।তাদের যোগাযোগের তথ্য সংগ্রহ করে। ভিডিও, মেসেজ ও বিভিন্ন সতর্কতা সম্পর্কিত তথ্য জোগাড় করে। তা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, সরকারী ও বেসরকারী গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বিক্রয় করে। অনেক সিকিউরিটি এক্সপার্টই দাবী করেন, মুনাফাভিত্তিক এই সংগঠনের বাৎসরিক আয় ৯০ মিলিয়ন ডলার।

এমন কি বাংলাদেশের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার সময়ও সাইট ইন্টিলিজেন্স সর্বপ্রথম হামলাকারীদের তথ্য প্রকাশ করে। ইদানিং বাংলাদেশে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায়ও সাইট ইন্টিলিজেন্স ইসলামিক স্টেটের(আইএস)দায় স্বীকারের ঘটনা জানায়। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে কারা চালায় এই সাইট ইন্টিলিজেন্স? আর কে এই সাইট ইন্টিলিজেন্সের প্রতিষ্ঠাতা রিটা কার্টজ?

রিটা কাটজের শৈশব কাটে ইরাকের বসরা নগরীতে। ধারনা করা হয় তার বাবা ছিলেন একজন ইজরাইলী গুপ্তচর। সাদ্দাম হোসেইন ক্ষমতায় আসার পর ইজরাইলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি ও ইরাকবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে তার মৃত্যূদন্ড হয়। এরপর কাটজের মা তাকে নিয়ে ইরান হয়ে ইজরাইলে পালিয়ে যান। একই সাথে একজন আরব ও একজন ইহুদি হওয়ায় হিব্রু ও আরবী এই দুই ভাষায়ই রিটা কার্টজ দক্ষ হয়ে উঠেন। তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি জায়োনিস্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। সেখান থেকেই জড়িয়ে যান শেন বেটের সাথে। শেন বেট হলো এমন একটি পুলিশী ক্ষমতাসম্পন্ন ইজরাইলী সংগঠন, যারা ইজরাইলের অস্তিত্ব রক্ষায় কাজ করে যান।

আরবী ভাষায় দক্ষতার দরূন তিনি সহজেই ছদ্দবেশ নিতে পারেন। বোরকা পড়ে তিনি মিশে যান প্যালেস্টাইনি নারীদের সাথে। গড়ে তোলেন তাদের পক্ষে আন্দোলন। তহবিলও সংগ্রহ করেন। ভেতরে ভেতরে তিনি তথ্য জোগাড় করতে শুরু করেন। যা তিনি শেন বেট ও মোসাদের কাছে দিয়ে দিতেন।

পরবর্তিতে তার এই তথ্য জোগাড় করার পদ্ধতি রপ্ত করার পর তিনি এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব বুঝতে পারেন। ফলশ্রুতিতে পাড়ি জমান মার্কিন মুল্লুকে। প্রতিষ্ঠা করেন সাইট ইন্টিলিজেন্স। বিশ্বের বড় বড় মিডিয়া হাউজের সাংবাদিকরা, গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তার প্রতিষ্ঠানের সাবস্ক্রাইবার। তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সেরা সেরা কম্পিউটার প্রোগ্রামার, আরবী ভাষায় দক্ষ লোকজন। অনেকেই দাবি করে থাকেন যে অনলাইনে যেই রিটা কার্টজের ছবি দেখা যায়, তা আসলে রিটার ছবি নয়। রিটা কার্টজের প্রকৃত ছবি হাতেগোনা কয়েকজনের কাছে আছে।

তবে স্বভাবতই প্রশ্ন থেকে যায় যে এতো তথ্য সাইট ইন্টিলিজেন্স কিভাবে পায়? এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মত হলো রিটা কার্টজ আসলে তার অতীত অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগান। তার কর্মীরা আসলে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে নিজেরাই জড়িয়ে পড়েন তথ্য জোগাড় করার জন্য। এমন কি অর্থের প্রলোভন দেখিয়েও তারা তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। তবে সতর্কতামূলক কোন পোস্ট তারা তাদের ওয়েবসাইটে করেন না। তারা দায় স্বীকার এবং বিভিন্ন চলমান ঘটনাই সাইটে প্রকাশ করেন। তবে বাংলাদেশের ঘটনা রিটা কার্টজ নিজে টুইট করায় বাংলাদেশ বিষয়ে তার আগ্রহ রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

তবে বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম দাবি করেছেন যে  রিটা কার্টজের দেওয়া নিউজগুলো একেবারেই মন গড়া। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে সাইট ইন্টিলিজেন্স আইএসের দায় স্বীকার করার কথা বললেও পরবর্তিতে আইএসের দায় সে ঘটনায় পাওয়া যায় নি। আর বাংলাদেশী মিডিয়া যে খবর পায় না সে খবর সাইট ইন্টিলিজেন্স কিভাবে পায়? তারও প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে বলেন যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাইট ইন্টিলিজেন্সের নিউজ মন গড়া হয়ে থাকতেই পারে বা হয়তো তথ্যে ভুল হতে পারে। তবে সাইট ইন্টিলিজেন্স একেবারেই বাতিল প্রতিষ্ঠান নয়। বিশেষ করে হলি আর্টিজানের হামলাকারীদের পূর্নাঙ্গ পরিচয় সাইট ইন্টিলিজেন্সই প্রথম তুলে ধরে।

সাইটের কর্মকান্ডে অনেক বিতর্ক থাকলেও এখন বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে। যার ফলে যেমন নাম তার ছড়িয়েছে বেড়েছে মুনাফাও। তবে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করার বিকল্প নেই।