বিনোদন ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ০১:১১

অনিল কাপুর, সঞ্জয় দত্তদের নায়িকা এখন ‘বেকার’


বিনোদন প্রতিবেদক: স্বপ্ন ছিল বিমানসেবিকা হওয়ার! অনিল কাপুর, সঞ্জয় দত্তদের নায়িকা এখন ‘বেকার’ শুরুর দিকে অভিনয় পেশাকে বেছে নেননি নম্রতা। তাঁর স্বপ্ন ছিল বিমানসেবিকা হওয়ার। ঘটনাচক্রে অভিনয় জগতে পা রাখেন তিনি।

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় তুখোড় ছিলেন নম্রতা। কিন্তু তাঁর বোন শিল্পার স্বভাব-চরিত্র ছিল একদম তাঁর বিপরীত। প়ড়াশোনায় মন ছিল না শিল্পার। তাঁর ঝোঁক ছিল অভিনয়ের প্রতি।

সঞ্জয় দত্ত, অনিল কপূর, সইফ আলি খান, অজয় দেবগনের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন নম্রতা শিরোদকর। বর্তমানে বলিপাড়া থেকে অনেক দূরে নিজের সংসার নিয়ে মেতে রয়েছেন তিনি।

‘পুকার’ ছবির কথা মনে পড়ে? ২০০০ সালে রাজকুমার সন্তোষীর পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। অনিল কপূর, মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন নম্রতা শিরোদকর।

১৯৭২ সালে মহারাষ্ট্রের গোয়ান বংশের পরিবারে জন্ম নম্রতার। তাঁর দাদী মীনাক্ষী শিরোদকর অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ব্রহ্মচারী’ নামের একটি মরাঠি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মীনাক্ষী। ১৯৭২ সালে মহারাষ্ট্রের গোয়ান বংশের পরিবারে জন্ম নম্রতার। তাঁর ঠাকুরমা মীনাক্ষী শিরোদকর অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ব্রহ্মচারী’ নামের একটি মরাঠি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মীনাক্ষী।
পাঁচ বছর বয়সে শিশু অভিনেতা হিসাবে শত্রুঘ্ন সিন্‌হার সঙ্গে ‘শির্দি কে সাই বাবা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন নম্রতা।

কিন্তু নম্রতা চাইতেন আকাশে পাড়ি দিতে। তাঁর স্বপ্ন ছিল বিমানসেবিকা হওয়ার। তার জন্য পরীক্ষাও দিয়েছিলেন তিনি। পরীক্ষায় পাশের খবর বাড়িতে জানালে তাঁর মা এই পেশায় কাজ করতে মানা করেন নম্রতাকে।নম্রতা এবং শিল্পা— দুই মেয়েকে নিয়ে এক জনপ্রিয় চিত্রগ্রাহকের কাছে যান নম্রতার মা। তিনি লোকমুখে শুনেছিলেন, বলিউডের নামকরা তারকাদের ছবি তুলেছেন এই চিত্রগ্রাহক। তিনি দুই মেয়ের ছবি তুলে দিলে তাঁরাও বলি ইন্ডাস্ট্রিতে খ্যাতি অর্জন করবেন বলে নিশ্চিত ছিলেন তাঁর মা।

অবিলম্বে দুই বোনের পোর্টফোলিয়ো শুট করা হয়। শিল্পা অভিনয় করবেন বলে অডিশন দিতে শুরু করেন। নম্রতার পোর্টফোলিয়ো তৈরি করা হয় মডেল হিসাবে। এক নামী পোশাকশিল্পী নম্রতার ছবি দেখে পছন্দ করেন এবং মডেলিং জগতে খুব দ্রুত খ্যাতি অর্জন করে ফেলেন নম্রতা।

মডেলিং পেশার পাশাপাশি ১৯৯৩ সাল নাগাদ এক জনপ্রিয় সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছিলেন নম্রতা। তাঁর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিলেন মাহীপ কপূর এবং পূজা বাত্রার মতো তারকারা। এ ছাড়াও অন্যান্য সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন নম্রতা।

ছবির সব কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও এই ছবি মু্ক্তি পায়নি। পরবর্তী কালে এই ছবির নাম বদল করে রাখা হয় ‘হ্যালো ইন্ডিয়া’। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মুক্তি পায়নি ছবিটি।

১৯৯৮ সালে মুক্তি পায় ‘যাব প্যার কিসি সে হোতা হ্যায়’ ছবিটি। সালমান খান এবং টুইক্লেল খান্না এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নম্রতা।

ঠিক তার পরের বছর সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে ‘বাস্তব’ ছবিতে এবং অজয় দেবগন, মনীষা কৈরালা এবং সইফ আলি খানের সঙ্গে ‘কাচ্চে ধাগে’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। অভিনেত্রী এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, এই ছবিগুলিতে জনপ্রিয় তারকারা অভিনয় করছেন বলেই তিনি অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলেন।

এ ছাড়া মহেশ মাঞ্জরেকরের পরিচালনায় ‘অস্তিত্ব’, ‘হাতিয়ার’, ‘তেরা মেরা সাথ রহে’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন নম্রতা। পরিচালককে নিজের ‘গুরু’ হিসাবে দেখতেন অভিনেত্রী। নম্রতাকেও তিনি স্নেহ করতেন।

বহু জনপ্রিয় হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার পাশাপাশি কন্নড়, মালয়ালাম, তেলেগু, মারাঠি ভাষার বিভিন্ন দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাকে।

যখন তার ক্যারিয়ারে নাম করছেন, সেই সময় দীপক শেট্টি নামের এক রেস্তরার মালিকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান নম্রতা।

বলিউড পাড়ার একাংশের দাবি, দীপকের সঙ্গে একত্রবাস করতেন তিনি। কানাকুসা যায়, তারা নাকি গোপনে বিয়েও করেছিলেন। যদিও এই প্রসঙ্গে নম্রতা কিছু জানাননি।

২০০০ সালে ‘ভামসী’ নামের একটি তেলুগু ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান নম্রতা। এই ছবিতে দক্ষিণের জনপ্রিয় অভিনেতা মহেশ বাবুর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। অভিনয় সূত্রে দুই তারকার বন্ধুত্ব হয়। অচিরেই সেই বন্ধুত্ব প্রণয়ের সম্পর্কে পরিণত হয়। দীর্ঘ পাঁচ বছর গোপনে একে অপরকে ডেট করেছিলেন তাঁরা।
অভিনয় সূত্রে দুই তারকার বন্ধুত্ব হয়। অচিরেই সেই বন্ধুত্ব প্রণয়ের সম্পর্কে পরিণত হয়। দীর্ঘ পাঁচ বছর গোপনে একে অপরকে ডেট করেছিলেন তাঁরা।

অভিনেতা চাইতেন না, তাঁদের সম্পর্কের আঁচ কেরিয়ারে কোনও প্রভাব ফেলুক। তাই দু’জনের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আনেননি কেউই।

মহেশের চেয়ে চার বছরের বড় ছিলেন নম্রতা। এই নিয়ে অনেকে কটু কথা বলতে পারেন ভেবেও কাউকে সম্পর্কের কথা জানাতে চাননি মহেশ।

দীর্ঘকালীন সম্পর্কে থাকার পর ২০০৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মহেশ এবং নম্রতা। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, মহেশ নাকি বিয়ের আগে শর্ত রেখেছিলেন যে, বিয়ে করলে তাঁকে অভিনয় জগৎ থেকে পুরোপুরি সরে যেতে হবে। নম্রতা নাকি এই শর্তে রাজি হয়ে বিয়ে করেন মহেশকে।

কেউ কেউ মনে করেন, মহেশের কারণে নয়, বরং ইন্ডাস্ট্রিতে তখন রাতারাতি বদল আসায় বলিপাড়া থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। অনেকের ধারণা, যে অভিনেত্রীরা নাচে দক্ষ, অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করতে যাঁদের সমস্যা নেই, তাঁদের কাজ দেওয়া হচ্ছিল। এই পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারবেন না বলে স্বেচ্ছায় অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। যদিও এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি নম্রতা।

বিয়ের এক বছর পর পুত্রসন্তানের জন্ম দেন নম্রতা। তারও কয়েক বছর পর মহেশ এবং নম্রতার ঘর আলো করে কন্যাসন্তান আসে। বর্তমানে নম্রতা আলোর রোশনাই থেকে দূরে, নিজের সংসার নিয়েই মজে রয়েছেন।

আমাদের কাগজ /ইআ